এমপিওর আশায় বিনা বেতনে ২০ বছর
রফিকুন্নবী চৌধুরী, সিদ্ধিরাম ঘোষ, তপন বিশ্বাস
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:০৬
কলেজ এমপিও হবে, বেতন পাবেন, স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করবেন- এমন আশায় তিন শিক্ষক বিনা বেতনে ২০ বছর চাকরি করেছেন। অথচ কলেজ এমপিও হলেও তারা এমপিওভুক্ত হননি।
রাজবাড়ীর পাংশায় পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজের ভুক্তভোগী তিনি শিক্ষক হলেন- রফিকুন্নবী চৌধুরী, সিদ্ধিরাম ঘোষ ও তপন বিশ্বাস। তাদের অভিযোগ অধ্যক্ষের কারণে তাদের জীবনের ২০টি বছর শেষ হয়ে গেল।
জানা গেছে, কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। কারিগরি শাখা ২০০৪ সালে ও সাধারণ শাখা এমপিও হয় ২০২২ সালে। বর্তমানে কলেজের ছাত্রী সংখ্যা প্রায় তিনশ। শিক্ষক রয়েছেন ২১ জন।
পাংশার সরিষা ইউনিয়নের বহলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুন্নবী চৌধুরী (৪৭) বলেন, ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি এ কলেজে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রয়াত আব্দুল ওহাব তাঁকে নিয়োগ দেন। ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা বেতনে চাকরি করেন। করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। সেটাও তিনি করেছেন। ২০২২ সালের ১৬ জুলাই তিনি কলেজে গেলে অধ্যক্ষ তাঁকে কলেজে আসতে নিষেধ করেন। কিন্তু কলেজ থেকে তাঁকে অব্যাহতিপত্র দেয়নি। ২০২২ সালের ২৫ জুলাই পাংশা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন তিনি। মামলাটি এখনও চলমান। এর মধ্যে জানতে পারেন স্বর্ণালী খাতুন নামে একজনকে ইংরেজি শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন পদে থাকতে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই। তিনি বলেন, এমপিও হবে এ আশায় ২০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। পরিবারের ওপর নির্ভরশীল থেকেছেন। আয়-রোজগার না থাকায় বিয়েই করতে পারেননি। বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে এবং জমি ইজারা দিয়ে চলছেন। অধ্যক্ষের কারণে তাঁর জীবনটাই শেষ হয়ে গেল।
পাংশা কলেজপাড়ার বাসিন্দা তপন বিশ্বাস জানান, ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এ কলেজে চাকরি করছিলেন। ২০২২ সালে কলেজ এমপিও হলেও তাঁর এমপিও হয়নি। এমপিওর জন্য দুই-তিনবার ফাইল পাঠানো হলেও তা ফিরে আসে। সম্পূর্ণ বিনা বেতনে কলেজে চাকরি করেছেন। কিন্তু এমপিওতে তাঁর কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতার অভাব দেখানো হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি ২০১৬ সালে মামলাও করেছিলেন। মামলাটি অনেক দূর এগিয়েছিল। তৎকালীন এমপি জিল্লুল হাকিম তাঁকে মামলা তুলে নিতে বলায় মামলাটি তুলে নিয়েছেন। তাঁর বয়স ৫৮ বছর। আশায় ছিলেন একদিন তাঁর চাকরিও এমপিও হবে। কিন্তু অধ্যক্ষ নিজের পছন্দমতো লোক নিয়োগ করেন। তাঁর কারসাজির কারণেই এমপিও হয়নি।
নারায়ণপুর গ্রামের সিদ্ধিরাম ঘোষ বলেন, ১৯৯৯ সালে ৩৪ বছর বয়সে তিনি পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে যোগ দেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন আইসিটি বিষয়ে। তিনি কলেজে ২০ বছর চাকরি করলেও কোনোদিন বেতন পাননি। অধ্যক্ষ তাঁর বিপক্ষে কাজ করে এমপিও করেননি।
এ বিষয়ে পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান বলেন, সিদ্ধিরামের সনদ যাচাইয়ে দেখা গেছে সেটি ভুয়া। তপনকে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই পদে ছিলেন জিয়াউর রহমান নামে একজন। কলেজের একটা মামলা হয়। ওই মামলা চালাতেন তপনের ভাই স্বপন বিশ্বাস। স্বপনের সুপারিশে তাঁর ভাইকে কলেজে নিতে বললে নেওয়া হয়। পরে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয় বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। তখন নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আবেদন করতে বলা হয়। তারা কলেজ থেকে তপনের নাম দিয়েই পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু হয়নি। সরকারি নীতিমালায় না থাকায় তাঁর এমপিও হয়নি। ইংরেজি শিক্ষক পদ শূন্য। রফিকুন্নবী কখনই নিয়োগ পাননি। তাঁকে ইংরেজি বিষয়ে পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নিবন্ধন পাস করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি নিবন্ধন পরীক্ষা দেননি। মামলা চলাকালীন আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিয়োগ দেওয়া যায়। এটা নীতিমালায় আছে। এমপিও না হওয়ার পেছনে তিন শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন তা অস্বীকার করেন তিনি।
কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও পাংশার ইউএনও এসএম আবু দারদা বলেন, তিনি পাংশায় সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি জানেন না। খোঁজ নিয়ে যা করণীয় করা হবে।
- বিষয় :
- বেতন