সম্ভাব্য কমিটি ঘিরে দ্বন্দ্ব কুমারখালী বিএনপিতে
নুরুল ইসলাম লুৎফর রহমান গোলাম মহম্মদ
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:২৩
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা বিএনপির ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। তাদের ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হলেও ব্যর্থ হন নেতারা। ফলে দলীয় কার্যক্রম চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। চলতি বছরের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা কার্যত ছিলেন ঘরবন্দি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বদলে যায় পরিস্থিতি। বিএনপির নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীর দেখা মেলে রাজপথে। যদিও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা দ্বন্দ্বে এসব কার্যক্রম বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হয়েছে। এ অবস্থায় ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বিএনপি।
সূত্র জানায়, দলকে ঐক্যবদ্ধ করে শৃঙ্খলা ফেরানো ও কার্যক্রমে গতি বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা বিএনপির নেতারা। যদিও ভবিষ্যৎ আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ দুই পদের জন্য অন্তত আট নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেক নেতাকর্মীরা।
উপজেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া দুই দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত আরও চার নেতা। তারা হলেন– জেলা বিএনপির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী ও নুরুল ইসলাম আনছার প্রমাণিক, সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম মহম্মদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমান তুহিন। এই পাঁচ নেতার সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। ফলে কোন্দল বাড়ছে।
এদিকে নতুন কমিটির আহ্বায়ক পদের জন্য তিন নেতা জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এ পদে উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন– জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিক, জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম মহম্মদ। আর সদস্য সচিব পদের জন্য জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য খন্দকার মোস্তাফিজুর তুহিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব কে আলম টমে, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য নওয়াব আলী ও চাঁদপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা পলাশ হোসেন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
একাধিক নেতার অভিযোগ, পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে ২০১৯ সালের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন। তাদের মধ্যে সদকী ইউপিতে হেরে যান লুৎফর রহমান। তবে পান্টি ইউপিতে জয়ী হন হাফিজুর রহমান।
যদিও সদস্য সচিব পদপ্রত্যাশী হাফিজুর রহমান দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর ভাষ্য, সরকারবিরোধী রাজনীতি করায় অত্যাচার সহ্য করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এ জন্য ১৩টি রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। সদস্য সচিব পদে আসতে আরও চারজন নেতা আগ্রহী।
যেসব নেতা শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তাদের মূল্যায়নের আহ্বান জানান খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমান তুহিন। তিনি ১৬ বছরে অন্তত ১৮টি রাজনৈতিক মামলার শিকার হয়েছেন জানিয়ে বলেন, যারা দলীয় নীতি-আদর্শ মেনে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছেন, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে দলকে সুসংগঠিত করতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বলে জানান উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক লুৎফর রহমান। আগামী কমিটিতেও আহ্বায়ক পদে তাঁকে রাখা হবে বলে আশাবাদী। যদিও আরও দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। ইউপি নির্বাচনের বিষয়ে লুৎফর রহমান বলেন, ওই নির্বাচন বিষয়ে দলীয় তেমন বিধিনিষেধ ছিল না। তাই অংশ নিয়েছিলেন।
বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটিগুলো গঠনের আশ্বাস দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির সরকার। তিনি বলেন, এ জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করা হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল হওয়ায় কিছুটা গ্রুপিং আছে। তবে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়েই নতুন কমিটি করা হবে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হবে দলীয় শৃঙ্খলা ফেরানো ও নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই কমিটি হবে বলেও জানান তিনি।
- বিষয় :
- কমিটি