ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মেহেরপুরে আগাম জাতের পেঁয়াজে স্বস্তির খবর

মেহেরপুরে আগাম জাতের পেঁয়াজে স্বস্তির খবর

আগাম জাতের পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত কৃষক সমকাল

 ফারুক হোসেন, মেহেরপুর

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:২৯

মেহেরপুরের বাজারে উঠেছে আগাম নাসিক জাতের পেঁয়াজ। গত সোমবার থেকে কৃষকরা উত্তোলন শুরুর পর থেকে দামেও প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
মেহেরপুর কাঁচাবাজারের আড়তদার মিজানুর রহমান জানান, কয়েক দিন ধরে কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আড়তে আনছেন। ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দাম পাচ্ছেন। পেঁয়াজ পুষ্ট কিছুটা কম হলেও দামে পুষিয়ে যাচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় কয়েক মাসে লাফিয়ে বেড়েছে দাম। তবে পেঁয়াজের ঘাটতি কমিয়ে দামের লাগাম টানতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে বীজ, সার ও নগদ অর্থ দিয়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয়।
মেহেরপুরের কৃষকরা জানান, তাদের তিন হাজার কৃষক এ বছর বিনামূল্যে নাসিক জাতের পেঁয়াজ বীজ পেয়েছেন। নিজ উদ্যোগেও দেড় হাজার একর জমিতে চাষ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে আগাম জাতের পেঁয়াজ। বিঘায় খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পরিপুষ্ট না হওয়ায় বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ ফলন মিলছে। তবে দাম ভালো থাকায় খরচ বাদে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ঘরে তুলতে পারছেন চাষিরা। অবশ্য পরিপূর্ণ পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ জমিতে রাখতে রাজি নন চাষিরা। কারণ হিসেবে বলছেন, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুব বেশি। বেশি ফলনের আশায় ঝুঁকি নিলে ঝামেলা হতে পারে। ফলন ভালো হলো। কিন্তু দাম পড়ে গেলে লোকসান গুনতে হবে।
সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে সরকারের দেওয়া বীজ সার, ও নগদ টাকায় আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছি। বৃহস্পতিবার ১০ কাঠা জমি থেকে ৩৮ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। আড়তে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদেও এক লাখ টাকার মতো ঘরে আনতে পেরেছি।’
মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি আশাদুল ইসলাম বলেন, এখন পেঁয়াজের দাম ভালো। সবাই তোলা শুরু করলে দাম পড়ে হাজারে নেমে আসবে। এ জন্য ফলন কিছুটা কম হলেও সবাই আগে তুলে বিক্রি করছেন।
একই গ্রামের চাষি সামছুল গাইন বলেন, এ বছর চার বিঘা জমিতে সরকারের দেওয়া বীজে চাষাবাদে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু পেয়েছি মাত্র এক বিঘা জমির। পরে কিনে আরও এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনের মতো দামও খুব ভালো পাচ্ছি।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক রানা হামিদ বলেন, মেহেরপু‌রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম। আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের উপযোগী বলে গ্রীষ্মকালীন এ পেঁয়াজ চাষ সম্ভব হচ্ছে। তবে এ সময় পেঁয়াজ চাষ লটারির মতো। অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে চাষিকে লোকসান গুনতে হবে। মেহেরপুর গ্রীষ্মকালেও পেঁয়াজ চাষের উপযোগী জেলা হওয়ায় এখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার করা দরকার। তাহলে অফ সিজনেও দামের লাগাম টানা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, কৃষি বিভাগ তিন হাজার কৃষককে তিন হাজার বিঘা জমির জন্য পেঁয়াজ বীজ, সার ও নগদ টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। কিছুটা অপরিপক্ব অবস্থায় কৃষকরা পেঁয়াজ তুলে ফেললেও ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, জেলায় হিমাগার স্থাপনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। সফল হলে কৃষকরা সংরক্ষণের সুযোগ পেলে আরও লাভবান হতে পারবেন।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×