ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে  সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

হালুয়াঘাটে সবজিক্ষেতের পরিচর্যা করছেন এক কৃষক সমকাল

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪৯

সাম্প্রতিক বন্যায় পচে যায় ক্ষেতের আমন ধান। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি তারা। এ কারণে দেরিতে হলেও আমনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষক। এই অবস্থা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায়।
জানতে চাইলে গোরকপুর এলাকার প্রান্তিক কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, উপজেলায় কয়েকটি নদী রয়েছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় সবজি চাষ বেশি হয়। এ ছাড়া এলাকার মাটি শীতকালীন সবজি চাষে অনেক উপযোগী। হালুয়াঘাটে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বড় একটি অংশ সরবরাহ হয় রাজধানীতে। তবে এ বছর টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে এসব এলাকার ফসলি মাঠ। ফলে এখানকার সবজি উৎপাদন শুরু করতে দেরি হয়েছে। সহযোগিতার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর উপজেলায় ২৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়। এ বছর হালুয়াঘাট উপজেলায় নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১৭৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করেন চাষিরা। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় এবার ৩০ হাজার ৩২ জন কৃষকের ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি টাকারও বেশি।
বিলডোরা ইউনিয়নের বিলডোরা গ্রামের বাসিন্দা শরাফ উদ্দিন। তিনি প্রতি বছর আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করে চমক দেখান। তবে চলতি বছর তিনিও হতাশ। তাঁর ভাষ্য, তিন বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করেছিলেন। গত ৪ অক্টোবর পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে সব চারা মরে যায়। আবার নতুন করে চারা রোপণ করেছেন। কিন্তু এই সবজি যখন বাজারে উঠবে; তখন সবজির ভালো দাম থাকবে না।
একই ধরনের কথা বলেন শতেন্দ্র চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, ‘বর্ষার শেষ দিকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় উন্নতমানের সবজির চারা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে বিক্রি করি। তবে দুই মাস আগে টানা বৃষ্টির কারণে প্রথম দফায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য ঘেরের আইলে শীতকালীন সব সবজি ছিল, তাও নষ্ট হয়ে গেছে।’
এই গ্রামের অন্যরাও বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করেছিলেন। তবে বৃষ্টিতে প্রথম দফার বীজতলা ও রোপণ করা চারা নষ্ট হয়েছে। এ জন্য আবার নতুন করে সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন অনেকে। এতে মৌসুমের শুরুতে বাজার ধরতে না পারায় উৎপাদিত সবজির বাজারদর কম পাওয়ার শঙ্কায় তারা। এ জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি চাষিদের।
হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম। তিনি জানান, আগাম জাতের কিছু লাউ চাষ করেছিলেন। এতে লাভের মুখ দেখছেন।
হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফয়সাল বলেন, ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে হালুয়াঘাট স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। নতুন করে শীতকালীন সবজি বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমানের ভাষ্য, এ বছরে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি টাকারও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩০ হাজার ৩২। গত বছর উপজেলায় ২৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছিল। জলাবদ্ধতার কারণে এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১৭৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। ১১ হাজার কৃষককে বিনামূল্য সরিষার বীজ ও সার ১২ হাজার ৫০০ কৃষককে উন্নত জাতের ধানের বীজ, ৫ হাজার ৬৮০ জনকে ৬ প্রকারের শাক-সবজির বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পরামর্শ, বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। যারা না পাচ্ছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে।
 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×