চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের বড় অংশ শিশু ও বয়স্ক
১১ মাসে ডেঙ্গুতে প্রাণহানি ৪১, নভেম্বরেই মৃত্যু ১৬
নভেম্বরেও কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে তোলা -সমকাল
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:০৩ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৮:৪৬
বন্দরনগরীতে অবনতি হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতির। চলতি বছর ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে নভেম্বরে। গত মাসে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জনের দেহে নতুন করে মিলেছে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব। আক্রান্তদের বড় অংশ শিশু ও বয়স্ক। আক্রান্ত অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেও দুর্বলতার কারণে ফিরতে পারছেন না স্বাভাবিক জীবনে।
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর বিপজ্জনক ডেন-২ ও কসমোপলিটন প্রকরণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও গবেষকরা। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়লেও সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম দৃশ্যমান না হওয়ার অভিযোগ বেশির ভাগ বাসিন্দার। এতে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ওপর সর্বশেষ চার সংস্থার পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৮ ভাগের বেশি রোগীর শরীরে ডেঙ্গুর সবচেয়ে ক্ষতিকারক ধরন ডেন-২ এর অস্তিত্ব রয়েছে। বিপজ্জনক কসমোপলিটন প্রকরণ ছড়িয়ে পড়ারও তথ্য মিলেছে। তা ছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় সিভিল সার্জন কার্যালয় নগরে একটি জরিপ কাজ পরিচালনা করে। এতে নগরের ২৩টি এলাকাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে কয়েকটি আবাসিক এলাকাসহ ছয়টি এলাকাকে ‘লাল’ তালিকাভুক্ত, পাঁচটি এলাকাকে ‘হলুদ’, ছয়টি এলাকাকে ‘নীল’ এবং চারটিকে ‘সবুজ’ তালিকাভুক্তও করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর নভেম্বরে রেকর্ড ১ হাজার ২৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৩ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার যখন বাড়ছিল, ঠিক সেই সময় চসিকের সপ্তম মেয়র হিসেবে (৫ নভেম্বর) দায়িত্ব নেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খুলেছি। নিয়মিত মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কিনা, সেটিও তদারকি করছি। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। প্রত্যেকেরই উচিত বাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, বালতি, টায়ার এবং এসির ট্রেতে পানি জমতে না দেওয়া।’
এ প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আবদুর রব চৌধুরী বলেন, ‘গবেষণায় পাওয়া কসমোপলিটন প্রকরণটি অতীতে দেশের অন্য অঞ্চল থেকে পাওয়া প্রকরণগুলোর চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। এটি ডেঙ্গুর তীব্রতা ও মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। এটির কারণে রোগীর মাঝে লক্ষণ বেশি প্রকাশ পায়। আক্রান্তদের বেশির ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অনেকের প্রয়োজন হয় আইসিইউর।’
গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোন এলাকায় কোন ধরনের মশার উপদ্রব বেশি এবং এ মশার জন্য কোন ওষুধ কতটুকু ছিটাতে হবে, এটি নির্ণয় করে তা প্রয়োগ করতে হবে। হটস্পটগুলোতেও বাড়তি নজর দিতে হবে।’
সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বেশির ভাগ এলাকায় মশার উৎপাত বহুগুণ বাড়ার অভিযোগ পাচ্ছি আমরা। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারও বাড়ছে। মশা মারার ওপর জোর দিতে হবে বেশি।’
- বিষয় :
- ডেঙ্গু