স্বপ্নের সংসার করা হলো না নববধূ তিন্নির
নববধূ লামিয়া আক্তার তিন্নি।
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮:৪১
হাতের মেহেদির লাল রং মুছতে না মুছতেই স্বপ্নের সোনার সংসার শেষ হয়ে গেছে লামিয়া আক্তার তিন্নি (২০) নামের এক নবধূর। বিয়ের মাত্র ৮ মাসের মাথায় স্বামী মনিরুলের লাঠির আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরগুনার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লামিয়া আক্তার তিন্নি উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের মেয়ে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের মেয়ে তিন্নি আক্তার লামিয়ার সঙ্গে আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের হারুন খানের ছেলে আটোচালক মনিরুলের সঙ্গে চলতি বছরের মার্চ মাসে বিয়ে হয়। তিন্নি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বিয়ের মাত্র ৮ মাসের মাথায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্যত্র প্রেমের সম্পর্ক আছে এমন অভিযোগ তুলে মনিরুল ইসলাম স্ত্রী তিন্নির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় তিন্নি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে মনিরুল তার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তিন্নিকে আমতলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় স্ত্রীর লাশ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে মনিরুল। হাসপাতালে উপস্থিত জনতা তাকে আটক করে আমতলী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তিন্নির মরদেহ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
তিন্নির ভাই রাব্বি হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আমার বোনকে ৩ লাল টাকা যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যা করেছে। বিয়ের সময় আমার বাবা তিন্নির সংসারের সুখের কথা ভেবে সংসারের মালামাল এবং গলার চেইন ও কানের দুল দিয়েছিল। কিন্তু আমার বোনের কপালে সে সুখ সইলোনা মাত্র ৮ মাসের মাথায় তাকে ৩লক্ষ টাকার জন্য পিটিয়ে খুন করা হলো।
তিন্নির মামা নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন মনিরুল আমার ভাগ্নি তিন্নির নিকট নগদ ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। কিন্তু তিন্নির দরিদ্র বাবার পক্ষে এ যৌতুক দেওয়া সম্ভব না বিধায় তিন্নি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিন্নির স্বামী তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ বিষয়ে আমরা মামলা করবো।
নিহত তিন্নির মা রাহিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর মাইডার কপালে সংসার সইলো না। কি দোষ ছিল মোর মাইয়াডার। অল্প কয়দিন বিয়ার বয়স এইয়ার মধ্যে কিবা হরছে মোর মাইয়ায় যে হ্যারে পিডাইয়া মাইর্যা হালাইতে অইবে। মাইয়াডায় কইতো মা মুই একটা সোনার সংসার বানামু। মোর মাইয়াডার আর সোনার সংসার বানানো অলো না। মুই এইয়ার বিচার চাই।’
চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, যৌতুকের জন্য তিন্নিকে স্বামী মনিরুল এবং তার শ্বশুর হারুন খান শাশুড়ি লাইলী বেগম প্রায়ই নির্যাতন করতো। ঘটনার দিন স্বামী মনিরুল স্ত্রী তিন্নির নিকট ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ টাকা দিতে না পারায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। তবে অভিযুক্ত মনিরুলের স্ত্রী তিন্নির অন্যত্র প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমি নিষেধ করার পরও সে শুনতো না। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ দরবারও হয়েছে। ঘটনার দিন রাতে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে মাথায় সামান্য লাঠির আঘাতেই তার মৃত্যু হয় বলেও সে স্বীকার করে।
আমতলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান খান বলেন, তিন্নির মাথায় লাঠির আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
আমতলী থানার ওসি তদন্ত মো. আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ বলেন, হাসপাতাল থেকে তিন্নির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত তিন্নির স্বামী মনিরুলকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
- বিষয় :
- স্বামীর নির্যাতনে মৃত্যু
- বরগুনা