দোয়ারাবাজারে রাতভর উত্তেজনা, সম্মিলিত চেষ্টায় রক্ষা সম্প্রীতি
ম্যাপ
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:১৩ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:১৪
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার মোঙলারগাঁওয়ে মঙ্গলবার রাতভর উত্তেজনা ছড়ায়। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিক্ষুব্ধদের নিবৃত্ত করে প্রশংসায় ভাসছেন স্থানীয় আলেম ওলামা, রাজনৈতিক কর্মী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক জানিয়েছেন, অন্যের ফেসবুক পোস্টে ইসলাম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে দোয়ারাবাজার কলেজের শিক্ষার্থী আকাশ দাসের বিরুদ্ধে মামলা করেন এসআই আরাফাত ইবনে শফিউল্লা। পরে বুধবার হাজির করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আকবর হোসেন জানান, আকাশকে কারাগারে নিয়েছে পুলিশ।
সরেজমিন গতকাল মোঙলারগাঁও গ্রামের হিন্দু হাটিতে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়। আতঙ্কে এখনও অনেকে গ্রামে ফেরেননি। বিশেষ করে নারী সদস্যরা আশপাশে স্বজনের বাড়ি রয়েছেন। যারা ফিরেছেন, আশপাশের গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন এসে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছেন। বাড়িঘর গোছাতে সাহায্য করছেন। গ্রামে অন্তত ৯৫ হিন্দু পরিবারের বসবাস।
ফেসবুকে মন্তব্যকারী আকাশের বাবা প্রফুল্ল দাস উমান প্রবাসী। মা জ্যোৎস্না দাসকে বাড়িতে পাওয়া গেলেও কথা বলার জন্য দরজা খোলেননি। পাশেই আকাশের কাকাতো-জেঠাতো ভাইদের ঘর। তারা আকাশের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন।
প্রফুল্ল দাসের নিকট আত্মীয় মানিক লাল দাস বললেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গভীর রাতে টেবলাইয়ে এক বাড়িতে উঠি। দু’জনকে রেখে বাড়ি দেখতে এসেছি। সবকিছু তছনছ করা হয়েছে। একইভাবে গ্রামের কাজল দাস, মানিক লাল দাস, হরিধন দাস, সতন দাস, অশেষ দাস, সুবোধ দাস, বাবুল দাস, মতিন্দ্র সূত্রধর ও পিন্টু দাসের বাড়িতে বিক্ষুব্ধরা যান। এ সময় সুবোধ দাস মারধরের শিকার হন। পরে তাঁকে রাতেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা দোয়ারাবাজার হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম, সেনাবাহিনীর সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লে. কর্নেল নাফিজ ইমতিয়াজ মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা দেন। গতকাল বিকেলে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মুশফেকুর রহমান সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করেন।
নৈনগাঁও মহিলা মাদ্রাসার মুহতামিম আব্দুল করিম বলেন, ক্ষুব্ধ হাজারো মানুষ রাতে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে জড়ো হন। অবস্থা বেগতিক দেখে পথ আগলে দাঁড়িয়ে তাদের বলেছি– মুসলমানদেরই ধর্মীয় সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে– ইসলাম আমাদের এ শিক্ষা দিয়েছে। অপরাধ যে করেছে, তার শাস্তি চাই। কিন্তু নিরপরাধ অমুসলিমদের নিরাপত্তা দেওয়া সংখ্যাগুরু মুসলিমের ঈমানি দায়িত্ব। আশ্বস্ত হয়ে বেশির ভাগ মানুষ ফিরে যান। এর মধ্যেও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। আলেম ওলামারা প্রশাসনের সঙ্গে রাতভর উত্তেজনা কমাতে কষ্ট করেছেন। শেষ পর্যন্ত বড় বিপদ হয়নি, এটিই বড় পাওয়া।
নৈনগাঁওয়ের বয়স্ক ব্যক্তি আব্দুল খালিক ও তার ছেলে-ভাতিজারা কীভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন, তা জানালেন। বললেন, যত মানুষ গ্রামে ঢুকেছে, সে তুলনায় ঘরবাড়ির ক্ষতি তেমন হয়নি। আমাদের ছেলেরা পথে পথে দাঁড়িয়ে তাদের ফেরানোর চেষ্টা করেছে।
- বিষয় :
- সুনামগঞ্জ