১০ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ভাস্কর্য
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্লাস্টিকের তৈরি মূর্তি। সৈকতের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এই আয়োজন। ছবি: সমকাল
ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:৪৪
কক্সবাজারের সুগন্ধা-সি গাল পয়েন্ট নিয়ে সৈকতে ঢুকলেই দেখা মিলবে ভয়ংকর তিন দানবের। এর মধ্যে ‘আকাশছোঁয়া’ ৬২ ফুটের দানবটি দেখলে পিলে চমকে উঠবে যে কারও। তবে এগুলো কোনো রক্ত-মাংসের দানব নয়।
সমুদ্রাঞ্চলের প্রায় ১০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে বানানো হয়েছে এ ভাস্কর্য। প্লাস্টিক বর্জ্যে সমুদ্রের প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির দানবীয় ভয়াবহতা তুলে ধরতেই প্রতীকী এ আয়োজন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ভাস্কর্যগুলো তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এক দল শিল্পী। এ ভাস্কর্য প্রদর্শনী গতকাল বুধবার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়ামিন হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন চৌধুরী, বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী প্রমুখ।
ভাস্কর্যটির নির্মাণসংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এবং প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অপার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিন সমাগম হয় হাজার হাজার পর্যটকের। সৈকতে তাদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যে সমুদ্রে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ। হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও প্রকৃতি। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তারা আরও জানান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা কমাতে গত ৭ নভেম্বর পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ এবং স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ মার্কেট’ উদ্বোধন করা হয়। এখানে বোতল, পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিলে স্থানীয়দের চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং পর্যটকদের বই, কলম, ক্যাপ, ব্যাগসহ বিভিন্ন উপহার দেওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রম থেকে পাওয়া ১০ টন প্লাস্টিক দিয়েই ভাস্কর্যগুলো বানানো হয়েছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সবাইকে সতর্ক করতে এ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারে চার মাস ধরে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কাজ করবে বিদ্যানন্দ।
সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্রসৈকত থেকে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ভাস্কর্য পুরো পর্যটন মৌসুম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এটি সমুদ্রাঞ্চলের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘রোবট দানব’ দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর আবীর।