চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
চাকরি শুরুর তিন বছর পর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন!
ছবি: ফাইল
আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৪:০২
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিদ্যুৎ বিভাগে উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিদ্যুৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমা। কিন্তু শিক্ষাগত সে যোগ্যতা তাঁর ছিল না। তবে কোনোভাবে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট (পরীক্ষায় অবতীর্ণ সনদ) নিয়েছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তা দিয়েই চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন এক প্রকৌশলী।চাকরিতে যোগদানের তিন বছর পর বিদ্যুৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমা পাস করেছেন তিনি। কর্মস্থলে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা দেন আট বছর পর।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওই প্রকৌশলী হলেন আমির আবদুল্লাহ খাঁন। এভাবে চাকরি বাগিয়ে নেওয়াকে অবিশ্বাস্য বলছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তবে ওই প্রকৌশলীর দাবি, ‘তখন সেই সুযোগ ছিল।’
এভাবে চাকরি নিয়ে এক যুগ ধরে বহাল তবিয়তে আছেন আমির আবদুল্লাহ। দুই বছর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বও পেয়েছেন।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন আমির আবদুল্লাহ খাঁন। ১৯৯৬ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিয়মিত চূড়ান্ত (ফাইনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ফেল করেন। ১৯৯৭ সালের জুন ও জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় তিনি আবারও অংশ নেন। ওই বছরও তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি। একই বছরের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার ফল বের হওয়ার আগে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স কমপ্লিশন সার্টিফিকেট নেন তিনি। যেটি পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন একজন শিক্ষার্থী।
আমির আবদুল্লাহ খাঁন ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) হিসেবে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ১৭ বছরের সেই পুরোনো অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট ব্যবহার করেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) নিয়োগের যোগ্যতা কোনো স্বীকৃত ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমা। কিন্তু আমির আবদুল্লাহ বিদ্যুৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমা পাস না করেই ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি চসিকের প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন।
চাকরিতে যোগদানের দেড় বছর পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ তিনি দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সনদ উত্তোলন করেন আমির আবদুল্লাহ খাঁন। ২০২০ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সনদ জমা দেন।
সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোখতার আলমের সঙ্গে যোগসাজশে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন আমির। তখন সেটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হলেও পরবর্তী সময়ে সেটি ধামাচাপা পড়ে যায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আগে কেউ অভিযোগ করেনি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আমির আবদুল্লাহ খাঁন সমকালকে বলেন, ‘তখন অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করার সুযোগ ছিল। পাস করার পর সত্যায়িত সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। ২০১৮ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মূল সনদ পাওয়ার পর সেটিও জমা দিয়েছি। এখানে কোনো জালিয়াতি হয়নি।’
এদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ২ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব খোন্দকার ফরহাদ আহমদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
- বিষয় :
- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
- চসিক