ছেলের ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে পুত্রবধূর মাথা ফাটালেন শ্বশুর
সুমন হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮:২০ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০:০৬
দেনা শোধ করতে বাবা- মায়ের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার করেন এক যুবক। সেই টাকা নিয়ে ছেলের বউয়ের সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়ির কলহ লেগেই থাকত। এমন পরিস্থিতিতে অভিমান করে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস নিয়ে ওই যুবক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ দিকে মৃত্যু খবর শুনে ছেলের বউকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরের বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। পরে খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত যুবকের নাম সুমন হোসেন (২৫)। তিনি উপজেলা বাগুলাট ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের উকিল উদ্দিনের ছেলে এবং কুষ্টিয়ার একটি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করতেন। আহত গৃহবধূর নাম শিউলি খাতুন (২৩)। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আছেন। তার মাথায় দুইটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, ঋণ, জমি ইজারা ও ধার-দেনা করে প্রায় এক বছর আগে দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় তার প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খোয়া যায়। এর পর প্রায় ছয় মাস আগে বাবা উকিল ও মা আয়জানের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়ে একজনের দেনা শোধ করেন। এই টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত সুমনের বাবা-মায়ের সঙ্গে স্ত্রী শিউলির বাগবিতণ্ডা, তর্কাতর্কি ও কলহ লেগেই থাকত। কলহের জেরে গত সোমবার সন্ধ্যায় সুমনের ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন মা। এ নিয়ে বউ-শাশুড়ির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং ধারের টাকা ফেরত চান শাশুড়ি। এ ঘটনায় সুমন রাতে তার বউকে মারধর করেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে প্রয়োজনীয় মালামাল গুছিয়ে ভ্যান ডাকতে বাড়ির বাইরে যান শিউলি। এ সময় সুমন নিজে আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সুমনের বাবা উকিল লাঠি দিয়ে আঘাত করে স্ত্রী শিউলির মাথা ফাটিয়ে দেন।
সুমনের স্ত্রী শিউলি খাতুন বলেন, সুমন আমার শ্বশুর- শাশুড়ির কাছ থেকে ছয় মাস আগে এক লাখ টাকা ধার । এই টাকা নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি সব সময় আমার সঙ্গে ঝগড়া করেন। আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে সোমবার বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে আবারও ঝগড়া হয় এবং তারা টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে স্বামী আমাকে মারধর করলে মালামাল বাঁধে সকালে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তায় ভ্যান ডাকতে গিছিলাম। ফিরে দেখি স্বামী আমার ঘরে ঝুলছে। এসময় চিৎকার চেঁচামেচি করলে সবাই ছুটে এসে স্বামীকে নিচে নামায়। আর শ্বশুর মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেন।
মাথা ফাটানো ও ধার-দেনার টাকা নিয়ে পারিবারিক কলহের কথা স্বীকার করেছেন সুমনের বাবা উকিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ছেলের বউ ভালো না। সব সময় অশান্তি করে বাড়িতে। বউয়ের কারণেই ছেলে মারা গেছে। তবে তিনি কোনো বিচার চান না।
মাথা ফাটানোর বিষয়টি অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, খবর পেয়ে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে পরে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।