চরফ্যাসনে ১২ দিন নেই বিচারক, বিড়ম্বনায় বিচারপ্রার্থীরা
ছবি-সংগৃহীত
ভোলা ও চরফ্যাসন প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯:১১ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:৪৮
ভোলার চরফ্যাসন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক না থাকায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিচার প্রার্থীরা। বদলি জনিত কারণে ম্যাজিস্ট্রেটের পদটি ১২ দিন শূন্য রয়েছে। নতুন ম্যাজিস্ট্রেট যোগদান না করায় কার্যত বন্ধ রয়েছে সব ধরনের বিচারিক কার্যক্রম। নতুন করে কোনো নালিশী মামলা রুজু হচ্ছে না। গ্রেপ্তার বা আটক আসামিদের বিষয়ে আইনি সমাধানেও দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে করণীয় নিয়ে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট নিদের্শনাও। এ অবস্থায় আসামি ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাসন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানকে গত ২৮ নভেম্বর ঢাকায় বদলি করা হয়। তার পরিবর্তে চরফ্যাসন আদালতে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করা হয়নি। ভোলা সদরের একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাময়িক দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে চরফ্যাসন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বর্তমানে ৬৬৮টি সিআর মামলা বিচারাধীন আছে। জিআর মামলা আছে ৩৭৪টি। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বদলির পর নতুন কোনো সিআর মামলা না হলেও ২৮ নভেম্বর থেকে ০৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর ৮টি জিআর মামলা রুজু হয়েছে।
চরফ্যাসন বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাইনুল ইসলাম নাবিল সরমান জানান, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় বিচার প্রার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অহেতুক হয়রানীর শিকার হচ্ছেন মামলার আসামি পক্ষ। থানা পুলিশের দায়ের করা মামলা গুলোর জামিন চাওয়া নিয়ে যেমন বিড়ম্বনা হচ্ছে তেমনি জামিন যোগ্য মামলায় আসামিরা অহেতুক জেল খাটছেন। সামান্য কারণেও চরফ্যাসন থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের জেলা সদরের আদালতে নিতে হচ্ছে মামলার নথিগুলো।
মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, থানা থেকে এফআইআর হওয়া কিছু মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হলেও ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় যথাসময়ে উপস্থাপন ও শুনানি করা যাচ্ছে না। পুলিশের ধরে আনা (গ্রেপ্তার) আসামিদের ফরোয়াডিং করা ও ভিকটিমের জবানবন্দি নেয়াও বন্ধ আছে।
চরফ্যাসন আদালতের এপিপি মো. লিটন হাওলার বলেন, আদালতে চলমান মামলার সাক্ষী জানানো যাচ্ছে না ও নতুন কোনো মামলাও রুজু করা যাচ্ছে না। এছাড় গ্রেপ্তার করা আসামিদের জামিন চাওয়া নিয়ে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ৭০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। এতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ।
তিনি বলেন, পুরনো মামলায় যেসব আসামি জেলে আছেন তাদের পক্ষে জামিন আবেদন করা যাচ্ছে না। বিচারাধীন মামলাগুলোর বিচারকির কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকায় অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে চরফ্যাসন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিচার প্রার্থীরা।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মাসুম তালুকদার জানান, ভোলার চিফ জুডিশিয়াল আদালত থেকে নথি পাঠানোর কোনো আদেশ না পাওয়ায় মামলার নথি পাঠানো যাচ্ছে না। আদেশ পেলে জিআর মামলার নথি জেলা সদরের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, চরফ্যাসনে আদালত পরিচালনা না হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার। চরফ্যাসন আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট অনুপস্থিতকালীন কোথায় আদালত পরিচালনা হবে বা নথি ব্যবস্থাপনার কি করণীয় সে ব্যাপারে লিখিত কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি–না জানা নেই। তবে নালিশী মামলার বিচার প্রার্থী, জামিন প্রত্যাশী, নারী ও শিশু মামলার ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ, নিয়মিত মামলার আসামি এবং পরোয়ানায় গ্রেপ্তার আসামি প্রেরণে বিড়ম্বনা হচ্ছে বলে জেনেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।