ফাঁকা রসিদে চার গুন বেশি খাজনা আদায়
অনিয়ম করতেই সাঁটানো হয় না তালিকা
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৯
পৌর এলাকার কোহিত মহল্লার কৃষক লুৎফর রহমান ঝাপি জাল কিনতে নওগাঁ হাটে যান। ২০ টাকা খাজনার বদলে ইজারদারের নিয়োজিত লোক ৩০০ টাকা দাবি করেন। এত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর জাল আটকে রাখা হয়। পরে ২০০ টাকা খাজনা দিয়ে জাল ছাড়িয়ে নেন।
একই অবস্থা গুল্টা হাটের। এ হাটে খোলা স্থানে সবজি বিক্রি করেন মিনহাজ আলী। তাঁর জন্য ২০ টাকা খাজনা নির্ধারণ থাকলেও প্রতিটি হাটবারে তাঁকে ৪০ টাকা দিতে হয়। খাজনা আদায়ের রসিদ দেওয়া হয় না। দিলেও টাকার অঙ্কের স্থান ফাঁকা রাখা হয় বলে জানান তিনি।
লুৎফর রহমান বা মিনহাজ আলীর মতো, শতবর্ষী হাট দুটিতে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, সলংগা, উল্লাপাড়া; পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর; নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া; বগুড়ার শেরপুর এলাকার থেকে শত শত ক্রেতা-বিক্রেতা আসেন। তাদের অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে ইজারাদার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে তিন থেকে চার গুণ অতিরিক্ত আদায় করেন। ক্রেতার কাছ থেকেও আদায় করা হয় অতিরিক্ত টাকা। অবৈধভাবে খাজনা আদায় করতে খাজনা আদায়ের তালিকা বা সিটিজেন চার্টার সাঁটানো হয় না। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি খাজনা আদায়কারী কর্মীদের অসদাচরণের শিকার হয়ে হাটবিমুখ হচ্ছেন স্থানীয়রা।
শত বছর ধরে বৃহস্পতিবার বসে নওগাঁ হাট। আর গুল্টা হাটে কেনাবেচা হয় মঙ্গলবার। প্রতি হাটবার নওগাঁ হাটে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া বেচাকেনা হয়। গুল্টাতেও ৫০০ থেকে ৬০০ গরু, ছাগল, ভেড়া বেচাকেনা হয়। ছাগল ও ভেড়ার জন্য নির্ধারিত খাজনা ৫০ টাকা হলেও ২৫০ টাকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য খাজনা ৪০০ টাকার স্থলে ৬০০ টাকা আদায় করা হয়। রমজান ও কোরবানি ঈদে আরও বেশি টাকা টাকা দিতে হয়। তখন ছাগলপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, গরু ও মহিষের জন্য ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। বিক্রেতাদেরও গরুপ্রতি ২০০ ও ছাগলপ্রতি ১৫০ টাকা দিতে হয়। ধান, সরিষা, কাঁচাবাজার, কুটিরশিল্প সামগ্রী যেমন, ডালা, চালুন, টোপা, মোড়া, মাছ শিকারের উপকরণসহ হাটে বিক্রি হয় এমন সব জিনিসের খাজনা আদায় হচ্ছে নির্ধারিত টাকার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ।
শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় হাটমালিকরা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না কেউ।’ ঢাকার ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান ও পাবনার দাশুড়িয়া এলাকার মহাজন সোহেল রানা জানান, ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতা সীমা ছাড়িয়েছে। এ কারণে শতবর্ষী হাট থেকে ৫ বছরের ব্যবধানে পশু ও কৃষিপণ্য কেনাবেচা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নওগাঁ হাটের ইজারাদার হাই চৌধুরী। তাঁর ভাষ্য, ২ কোটি ৪০ হাজার টাকায় নওগাঁ হাট ইজারা নেওয়া হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পশুর হাট একটিই হয়। অনেক লোক কাজ করেন। এতকিছুর পর খাজনা সহনীয় রাখার চেষ্টা করা হয়। গুল্টা হাটের ইজারাদার আব্দুল হালিম বলেন, লোকে যত বলে তত নয়।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নওগাঁ ইউনিয়ন হাট-বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মজনু বলেন, উপজেলা হাট-বাজার পরিচালনা কমিটির নজরদারির অভাব রয়েছে। এ কারণে সরকারি নীতিমালাও মানেন না ইজারাদাররা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা হাট-বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুইচিং মং মারমা বলেন, সরকারি নীতিমালা
লঙ্ঘন করে খাজনা আদায়ের সুযোগ নেই।
নির্ধারিত মূল্যের বাইরে খাজনা আদায় করা হলে ইজারা বাতিল করা হবে।
- বিষয় :
- চাঁদা