‘মুই গরিব মানুষ বাপ, মোর গরম কাপড় কট্টি থাকি পাইম’
ছবি: সমকাল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:২২ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৫০
‘মুই গরিব মানুষ বাপ, মোর গরম কাপড় কট্টি থাকি পাইম। কাল রাইত থাকি ঝড়ির নাকান শীত পড়ে। গাত (শরীর) লুঙ্গি পেঁচে কাজত যাবাইছি।’ কথাগুলো এভাবে বলছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের দিনমজুর হুজুর আলী। কনকনে ঠান্ডার হিমেল বাতাস থেকে রেহাই পেতে জামার ওপর গায়ে লুঙ্গি বেঁধে কাজে যাচ্ছিলেন তিনি। ধরলা ব্রিজ পূর্ব পাড়ে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কে তার সঙ্গে দেখা হলে শীতে নিজের দুর্ভোগের কথায় এমনটি বলেন তিনি।
একই পরিস্থিতি সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক ভানু বেগমের। তিনি বলেন, ‘মোর বাড়িত ঘর নাই বাবা। ঠান্ডাত খুব কষ্টে রাইত কাটাং। মোক একটা কম্বল দিলে আল্লাহ তোমার ভালো করবে।’
উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে গত এক সপ্তাহ ধরে অগ্রহায়ণের শেষ সপ্তাহে জেঁকে বসেছে শীত। হিমালয়ের নিকটবর্তী এ জেলায় কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে-খাওয়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে পুরোনো কাপড় ভারি করে কাজে বের হচ্ছেন তারা।
চলতি বছরের শেষ দিকে সরকারিভাবে নতুন করে শীতের কাপড় কেনার জন্য অর্থ ও যথেষ্ট পরিমাণে কম্বল বরাদ্দ না থাকায় বিপাকে স্থানীয় প্রশাসন।
তবে এ থেকে সহসাই মিলছে না মুক্তি। তাপমাত্রা আরও নিম্নগামী হয়ে চলতি মাসেই ২টি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছে কুড়িগ্রামের কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশে ঘন কুয়াশার বলয় ও মেঘ থাকায় আজ বুধবার দুপুর ১২টার আগে সূর্যের দেখা মিলবে না। হিমালয়ের হিম বাতাস বইতে থাকায় ঠান্ডা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঠান্ডা তো আজ কয়েকদিন থাকি খুব পড়তেছে। আমার এলাকার মানুষজনক সব থেকে হতদরিদ্র। পরিষদ থেকে এখনো কম্বল বিতরণের জন্য কোনো বরাদ্দ পাইনি।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘শীতের জন্য এ বছর নতুন করে কম্বল বা অর্থ এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়নি। আমাদের কাছে ৯ উপজেলার জন্য ১৮০০ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । দ্রুতই এগুলো বিতরণ করা হবে।’
কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, ‘আকাশে মেঘের উপস্থিতি ও ঘন কুয়াশা থাকায় ঠিকমতো সূর্যের দেখা মেলেনি। এবং তাপমাত্রা আরও নিম্নগামী হয়ে চলতি মাসেই ২-৩টি শৈত্য প্রবাহ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।’
- বিষয় :
- শীতকাল
- শীতে জবুথবু
- ভোগান্তি