ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

এনআইডি করতে গিয়ে ধরা রোহিঙ্গা বাবা-মেয়েসহ ৩ জন

এনআইডি করতে গিয়ে ধরা রোহিঙ্গা বাবা-মেয়েসহ ৩ জন

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাদের আটক করা হয়। ছবি: সমকাল

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:১৩

বাংলাদেশি সেজে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে গিয়ে ধরা পড়েছেন রোহিঙ্গা বাবা-মেয়েসহ তিনজন। 

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে আটককৃতদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আটক তিনজন হলেন- সুমাইয়া আক্তার (১৯) ও তার বাবা মো. তৈয়ব (৪৫) এবং মো. ইসমাইল (৬৫)। এদের মধ্যে ইসমাইলের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডি ইউনিয়নে। 

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ জানান, সুমাইয়া ও তার বাবা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা। তবে ইসমাইল বাংলাদেশি নাগরিক। সুমাইয়ার জন্য এনআইডি কার্ডের আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনে ইসমাইলকে তার পিতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অথচ তার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি জন্ম নিবন্ধন সনদও আছে। সেটি জমা দিয়ে তথ্য গোপন করে কিছু প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও বুধবার দুপুরে ছবি তোলার সময় সন্দেহ হলে আমরা প্রথমে মেয়েটিকে আটক করি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকার করে। আসলে সুমাইয়ার বাবা তৈয়ব। 

তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তিনি প্রায় ২৫ বছর আগে মিয়ানমার থেকে তারা কক্সবাজারে আসেন। ২২-২২ বছর ধরে তিনি আনোয়ারায় বসবাস করে আসছেন। ইসমাইল তাদের প্রতিবেশী। ইসমাইলকে ভুয়া বাবা সাজিয়ে মেয়ের জন্য এনআইডি কার্ড পাবার কৌশল করেছিলেন তারা। 

জানা যায়, দুপুরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নির্বাচন অফিসে আসেন সুমি আক্তার (১৭) নামের এক রোহিঙ্গা নারী। এ সময় উপজেলার জুঁইদণ্ডি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ইসমাঈল নামের একজনকে নকল বাবা সাজিয়ে আনা হয়। এ সময় তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে তাদের নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যান নির্বাচন অফিসের দায়িত্বরতরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় বিশ বছর আগে থেকে মেয়েটির বাবা মো. তৈয়ব তার স্ত্রীসহ জুঁইদণ্ডি এলাকায় বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে মেয়েটির জন্মের পর তার মা মারা যায়। এরপর থেকেই মেয়ে এবং তার বাবা জুঁইদণ্ডি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস শুরু করেন। 

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মেয়েটির প্রকৃত নাম সুমি হলেও সুমাইয়া আক্তার মুন্নী নামে তার অন্য একটা জন্মসনদ দিয়েছে। সেই জন্মসনদে মো. ইসমাঈলকে বাবা এবং ইসমাঈলের স্ত্রী মোহসেনা খাতুনকে মাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন অফিসে সেই নারীর ভাই হিসেবে ইসমাঈলের ছেলে সিরাজুল ইসলাম, মো. ইউনুসের এনআইডি দেওয়া হয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাগজপত্র প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে সত্যায়িত করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম।

অভিযুক্ত সুমি আক্তার জানান, ‘আমি কেইপিজেডে চাকরি করি। চাকরি সুবাদে এনআইডি প্রয়োজন হওয়ায় এই পন্থা অবলম্বন করে এনআইডির বানানোর চেষ্টা করি।’ নকল বাবা ইসমাঈল জানান, ‘মেয়েটি কান্নাকাটি করে বলছে, তা-ই আমি মানবিক দৃষ্টিতে নকল বাবা সেজে এসেছি।’

জুঁইদণ্ডি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম জানান, ‘মেয়েটি আমি চিনি না, ইসমাইলের মেয়ে মনে করে ভুলবশত আমি স্বাক্ষর করেছি।’ 

ঘটনার বিষয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, সংশ্লিষ্ট দপ্তর লিখিত অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন

×