নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডে অস্থিরতা

খুলনার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর ট্রাস্টিদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন তারা পলাতক। এই সুযোগে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা খুলনায় রয়েছেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

বেশির ভাগ ট্রাস্টির অনুপস্থিতিতে গত মঙ্গলবার রাতে বোর্ডের ৬৯তম সভা করেছেন চেয়ারম্যান। এতে মিজানুর রহমান নামের একজনকে নতুন ট্রাস্টি সদস্য করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে কিছু সিদ্ধান্ত।

২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর অনুমোদন পায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ১৮ জন। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বোর্ডের ভার্চুয়াল সভায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় সিরাজুল হক চৌধুরীকে। তিনি অতীশ দীপংকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি ছিলেন। সাবেক মেয়র খালেক ও সাবেক এমপি কামালের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভাইস চেয়ারম্যান পদ বাতিল করা হয়। 

সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ট্রাস্টি বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাতে থাকেন সিরাজুল হক। ট্রাস্টি বোর্ডের শূন্য ৩টি পদে তিনি পছন্দের ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেন। কিন্তু বেশির ভাগ সদস্য এর বিরোধিতা করেন। ফলে ২০ নভেম্বর বেশ কয়েক শিক্ষার্থী ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোক্তা সদস্য তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ও পবিত্র কুমার সরকারকে বাদ দেওয়ার দাবিতে চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করেন। পরিকল্পিতভাবে তৈরি ওই মবের দাবির মুখে তিনজনকে সাময়িকভাবে কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আদেশ জারি করেন চেয়ারম্যান। 

অন্য ট্রাস্টিরা জানান, ১৮ জনের ট্রাস্টি বোর্ডে ৫ জন রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য। কিন্তু তাদের বাদ দেওয়ার দাবি না তুলে শিক্ষার্থীরা অরাজনৈতিক তিনজনকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানো নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চেয়ারম্যানই কিছু শিক্ষার্থীকে ভুল বুঝিয়ে পরিকল্পিত মব (লোক জড়ো করে উত্তেজনা) তৈরি করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৯তম সভা আহ্বান করেন চেয়ারম্যান। সেখানে খুলনায় অবস্থানরত উদ্যোক্তা ট্রাস্টিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, বরং বিপুলসংখ্যক বহিরাগত সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠক হয়। সেখানে নতুন সদস্য হিসেবে মিজানুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ৬৮তম বোর্ড সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন দিয়ে মিজানুর রহমানের সদস্য পদ নিশ্চিত করা হয়।

নর্থ ওয়েস্টার্ন ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোক্তা সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, নর্থ ওয়েস্টার্ন ট্রাস্ট  কোম্পানি আইন দ্বারা তৈরি একটি সত্ত্বা। তার একটি প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘটনায় ট্রাস্টিদের বাদ দেওয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যানসহ কারও নেই। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে সেই কাজই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৬৮তম বোর্ড সভায় মিজানুর রহমানকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আলোচনাই হয়নি। অথচ কার্যবিবরণীতে তাঁকে সদস্য হিসেবে নেওয়ার বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের বোর্ড সভায় সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

ট্রাস্টি বোর্ডের আরেক সদস্য তৌহিদুল ইসলাম আজাদ বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য আমরা চেয়ারম্যান পরিবর্তন করি। কিন্তু এখন তিনিই সবাইকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কারণে অনেকে বৈঠকে আসতে পারছেন না। ছাত্ররা অনেককে আসতে দিতে চাইছে না। এসব নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় দখল চেষ্টার অভিযোগ সঠিক নয়।