২০ মিটার সেতু তিন বছরে অর্ধেকও হয়নি
কাপাসিয়ার গিয়াসপুর-আড়ালবাজার আঞ্চলিক সড়কের বড়ধারা খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু সমকাল
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১৫
গাজীপুরের কাপাসিয়ার গিয়াসপুর-আড়ালবাজার আঞ্চলিক সড়কের গাঁওরা মধ্যপাড়া এলাকায় বড়ধারা খালের ওপর ২০ মিটার সেতুর নির্মাণকাজ তিন বছরে অর্ধেকও শেষ হয়নি।
জানা যায়, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ব্যস্ত এ সড়কে প্রতিদিন শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করছে। এ পথটুকু পার হতে গিয়ে প্রতিদিনই একাধিক যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়। এমনকি এ স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কিছুদিন আগে একজন যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাই সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল কাপাসিয়ার বারিষাব ইউনিয়নের গিয়াসপুর বাজার থেকে সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়ালবাজার সড়কের গাঁওরা মধ্যপাড়া এলাকায় বড়ধারা খালের ওপর বিশ্বব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৩ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫০১ টাকা চুক্তিমূল্যে ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রশস্ত গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে যানবাহন ও পথচারী পারাপারের জন্য খুলে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে দুই বছর হতে চললেও সেতুটির কাজ সহসাই সমাপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির নির্মাণকাজ শুরুর পর এ পর্যন্ত পাইল, পাইল ক্যাপ ও পিলারের কাজ শেষ করে দুই পাশের এভার্ডমেন্টের কাজ শেষ করা হয়েছে। ওপরের গার্ডার এবং স্লাব নির্মাণ অসমাপ্ত রাখায় নির্মাণাধীন অবকাঠামো ঘিরে লতাপাতা ও গাছপালা গজিয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুটির উত্তর পাশে মালপত্র রাখার ও পাহারাদারের একটি টিনের অস্থায়ী ঘর খালি পড়ে রয়েছে। প্রকল্পের বিবরণ সংবলিত সাইনবোর্ডের লেখাগুলোও মুছে গেছে। এখানে কিংবা আশপাশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন, যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রীর কোনো কিছুই নেই। সেতু নির্মাণের শুরুতেই নিচের ফসলি জমিতে মাটি ফেলে সাময়িক চলাচলের জন্য তৈরি পথটিও উঁচু-নিচু খানাখন্দে ভরা। এ পথে চলাচল করা যানবাহনগুলো যাত্রীদের একপাশে নামিয়ে অপর পাশে গিয়ে ফের তুলে নিচ্ছে। অনেক সময় ভ্যানগাড়ি, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা উল্টে যায়।
গাঁওরা গ্রামের আব্দুল মোতালিব জানান, ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে উপজেলার হাজার হাজার লোক এবং কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহের অসংখ্য মানুষ কাপাসিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলসহ নরসিংদী জেলা-উপজেলা ও সিলেট অঞ্চলে যাতায়াত করে থাকেন। সেতু না থাকায় এবং নিচের ফসলি জমির ওপর দিয়ে নিম্নমানের সাময়িক চলাচলের পথ নির্মাণ করায় প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বর্ষাকালে অল্প পরিমাণ বৃষ্টি হলেই নিচের রাস্তার কাদামাটি পার হতে যানবাহন ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাতের বেলা অপরিচিত লোকজনের জন্য এ স্থানটি মারাত্মক আতঙ্কের জায়গায় পরিণত হয়েছে। এখানে খুবই কম গতিতে যানবাহন চালাতে হয় বলে গভীর রাতে অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হন।
কাপাসিয়ার একজন ঠিকাদার জানান, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে প্রাক্কলিত মূল্য ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৬৫৮ টাকা ধার্য করা হলেও ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর চেয়ে ১২ শতাংশ কম মূল্যে কাজ নেওয়ায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে লাভবান না হওয়ার আশঙ্কায় শুরু থেকেই নানা টালবাহানা করতে থাকে। ফলে এ কাজটি যথাসময়ে সমাপ্ত হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেনি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও
সাড়া মেলেনি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাঈনউদ্দিন জানান, এ সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু ঠিকাদার আবারও কাজ শুরু করবেন বলে সময়ক্ষেপণ করে চলেছেন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি টেন্ডার বাতিলের সুপারিশ করেছেন।
- বিষয় :
- সেতু