ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

‘খুব শিত্তি লাগোছে, মোক শিত্তির কাপড় দেও বা’

‘খুব শিত্তি লাগোছে, মোক শিত্তির কাপড় দেও বা’

সরকারিভাবে এখনো শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু না হওয়ায় তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন তারা। ছবি: সমকাল

মওদুদ আহম্মেদ, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৪:৩৫ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৫৩

‘খুব শিত্তি লাগোছে, মোক শিত্তির কাপড় দেও বা। অনেক কষ্ট করে ঠান্ডার মধ্যে আছি বা। গরম কাপড় দিলে এ্যানা আরাম মতো ঘুম পারমু বাবা’- কনকনে তীব্র শীতে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলছিলেন আক্কেলপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে শুয়ে থাকা ষাটোর্ধ বৃদ্ধা হাজেরা বেওয়া। বাস্তহারা বসতভিটাহীন মানুষটি এই এলাকায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করেন। রাতের বেলায় রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের বারান্দায় ঘুমান। এখনো কোনো শীত বস্ত্র পাননি। তার মতো আরও অনেক অসহায় ছিন্নমূল, নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছেন এই উপজেলায়। সরকারিভাবে এখনো শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু না হওয়ায় তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন তারা।

এবার কিছুটা আগেভাগেই হাড় কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় উত্তরের জনপদ জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে শীত তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে পড়ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশার সঙ্গে দমকা বাতাস বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের প্রকোপ। গত কয়েক দিন থেকে তাপমাত্রার পারদ ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এই উপজেলার নিম্ন আয় ও ছিন্নমূল মানুষরা। শীত বাড়লেও এখনও সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। শীতবস্ত্রের অভাবে দারুণ কষ্টের মধ্যে দিনপার করতে হচ্ছে তাদের। তারা এক টুকরো গরম কাপড়ের জন্য আর্তনাদ করছেন। 

বৃহস্পতিবার রাতে আক্কেলপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এবং বারান্দার পাকা শানের মেঝেতে ২০ থেকে ২৫ জন ছিন্নমূল মানুষ তীব্র শীতের মধ্যে শুয়ে আছেন। কারো গায়ে জীর্ণ শীর্ণ পাতলা চাদর আবার কেউ গায়ে জড়িয়ে আছেন কাঁথা। উপরে ছাউনি থাকলেও বিছানার নিচ থেকে উঠছে ঠান্ডা। তাদের অধিকাংশই এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেন। তাদের থাকার জন্য স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই। তাদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র না থাকায় শীত নিবারণে অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। সরকারি বা বেসরকারীভাবেও কোনো গরম কাপড় তারা পাননি বলে জানান।

একইভাবে নিম্ন আয়ের মানুষও তীব্র শীতে কষ্টে আছেন। তারা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির যুগে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। শীতবস্ত্র কিনতে বাড়তি খরচের জোগানো যেন মরার উপর খড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ এখনও কোনো সহায়তা পাননি।

ভ্যানচালক বেলাল হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন থেকে প্রচুর ঠাণ্ডা পরেছে। জীবিকার তাগিদে রাস্তায় ভ্যান নিয়ে বেড় হচ্ছি। সারাদিন যা আয় রোজগার হয় পরিবারের ভরণ-পোষণে তা চলে যায়। শীতের কাপড় কিনতে বাড়তি খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এখনো কোনো সহায়তা পাইনি। 

রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে থাকা মিনি আক্তার বলেন, সারাদিন ভিক্ষা করে রাতের বেলা স্টেশনে এসে থাকি। এখানে আমাদের প্রচুর ঠাণ্ডা লাগে। ঠাণ্ডার জ্বালায় শান্তিমতো রাতের ঘুমও হয় না। আমাদের এখনো কেউ শীতের কাপড় দেয়নি। শীতের কাপড় পেলে খুব উপকার হবে বাবা।

স্টেশনমাস্টার হাসিবুল ইসলাম বলেন, এই রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এবং বারান্দা মিলে ২০ থেকে ২৫ জন ছিন্নমূল মানুষ রাতের বেলা শুয়ে থাকেন। হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় তারা অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। অতি দ্রুত সরকারি বা বেসরকারিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।

১৩ কিলোমিটার দূরের পার্শ্ববর্তী নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার মধ্যে সকাল ৯টার পর রোদের দেখা মিললেও উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্র বেশি অনুভূত হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে শীতবস্ত্র এখনো পাওয়া যায়নি। শীতবস্ত্রের জন্য ঊর্দ্ধতন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেক আগেই চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত আমরা শীতবস্ত্র পাবো। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, এবার এই উপজেলায় আগাম শীত পড়েছে। আমরা এখনো কোনো শীতবস্ত্র হাতে পাইনি। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের শীতবস্ত্র ক্রয়ের বরাদ্দ এসেছে। খুব শীঘ্রই শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র সরবরাহ করা হবে।

আরও পড়ুন

×