ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

দুই যুগের দীর্ঘশ্বাস

দুই যুগের দীর্ঘশ্বাস

নোয়াখালীর চাটখিলে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভিটে দেখাচ্ছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সমকাল

আনোয়ারুল হায়দার, নোয়াখালী

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৪৭

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যালয়টি। দীর্ঘদিন ভাঙা ঘরে পাঠদান চলে। এর পর ওয়ারিশরা মামলা করলে জটিলতা আরও বেড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পাঠদান। বিদ্যালয়ের মাঠে এখন ধান ও সবজি আবাদ করা হচ্ছে।
শহীদ এ বুদ্ধিজীবীর স্মৃতি ধরে রাখতে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তাঁর ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময়। গতকাল শুক্রবার সকালে বিদ্যালয়ের ভিটা পরিদর্শন করে এ দাবি জানান তিনি। এ সময় গ্রামবাসী তাঁর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, মুনীর চৌধুরী আমাদের দেশের গর্ব। অথচ তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব নেই। পরিত্যক্ত ভিটা লতাপাতায় ঢেকে আছে। কয়েকটি খুঁটি ছিল, তাও লুটপাট হয়ে গেছে। ভিটা ও আঙিনায় ধান ও সবজি আবাদ হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা দরকার। এতে নতুন প্রজন্ম শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বৃহত্তর নোয়াখালীর কৃতী সন্তানদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে।
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এই দিনে নোয়াখালীর কৃতী সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীকেও হত্যা করা হয়। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৭২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন কারণে একাধিকবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হয়। পরে মরহুম সেকান্দর আলী মাস্টারের স্ত্রী করিমুন নেছা ৫৪ শতাংশ জমি দান করলে গোপাইরবাগ গ্রামে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। ১৯৮৮ সালের মাঠ জরিপে জমিটি বিদ্যালয়ের নামে খতিয়ানভুক্ত হয়। প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নজরুল ইসলাম। স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের নিয়ে বিনা বেতনে ২০-২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। দুইবার ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু জমিদাতা করিমুন নেছার জামাতা ও ওয়ারিশসূত্রে অংশীদার আনোয়ার হোসেন ইরান আদালতে মামলা করায় ভবনের কাজ করা হয়নি। ২০০০ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় পাঠদান।
তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, মুনীর চৌধুরীর স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা বিনা পয়সায় পাঠদান করিয়েছি। ভবন নির্মাণের জন্য দুইবার সরকার থেকে অনুমোদনের ব্যবস্থা করেছি। মামলার কারণে আর এগোনো সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি।
শাহাপুর ইউনিয়নের গোপাইরবাগ গ্রামের রেণু রানী সূত্রধর বলেন, শাহাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করার জন্য কোনো বিদ্যালয় নেই। এলাকার শিশুদের দুই কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনেক অভিভাবক শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠান না। বিদ্যালয়টি চালু হলে অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমত।
স্থানীয় বাসিন্দা তপন মালাকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার যায়, সরকার আসে। কিন্তু কেউ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় না। তিনি বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হান্নান পাটোয়ারী বলেন, এ নামে কোনো বিদ্যালয় চাটখিলে আছে বলে আমার জানা নেই।
মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন ইরান বলেন, এ জমি নিয়ে বণ্টননামা মামলা হয়েছে। ওয়ারিশ ১৪৬ জন। ওয়ারিশ বেশি হওয়ায় মামলা তোলা যাচ্ছে না। তবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা পাক, সেটা আমরাও চাই। 
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইস্তিয়াক আহমেদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×