ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

পাথর আমদানিতেই সীমাবদ্ধ নাকুগাঁও স্থলবন্দর

পাথর আমদানিতেই সীমাবদ্ধ  নাকুগাঁও স্থলবন্দর

পাথর

 মিজানুর রহমান, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৫

পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে ২০১৫ সালে কার্যক্রম শুরু হয় নাকুগাঁও স্থলবন্দরের। অনুমতি দেওয়া হয় গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, সার, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, শুঁটকিসহ ২১ পণ্যের। তবে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের তদারকির অভাবে কয়লা ও পাথরের মধ্যে আটকে পড়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার এই বন্দরের কার্যক্রম। ভারতের পরিবেশবাদীদের বাধায় বন্ধ হয়ে গেছে কয়লা আমদানিও। শুধু সীমিত আকারে ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। কালেভদ্রে দুয়েক গাড়ি সিমেন্ট, তাঁতের শাড়ি ও মশারি রপ্তানি করা হলেও তা খুবই নগণ্য। এতে বন্দরের স্থাপনা অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে। আগ্রহ হারাচ্ছেন আমদানিকারকরা।
একটা সময় এই বন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন শতাধিক পাথরবোঝাই ট্রাক আসত। সেখানে এখন গড়ে মাত্র ২০-২৫টি ট্রাক আসছে। রপ্তানি কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বারাঙ্গাপাড়ার ডালু স্থল শুল্ক স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত এই বন্দর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। উচ্চ পর্যায়ের নজরদারি ছাড়া বন্দরের গতি বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকেই নাকুগাঁও বন্দরটি চালু ছিল চেকপোস্ট হিসেবে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে প্রায় ৩৩ বছর পর বন্দরটি ইমগ্রেশন চেকপোস্টসহ স্থল শুল্ক বন্দর হিসেবে পুনরায় চালু হয়। ২০১৪ সালে ভারত থেকে পণ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ, কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা ও সেবা দিতে নাকুগাঁওকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ দশমিক ৪৬ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় নিরাপত্তা প্রাচীর, ৪০০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ওয়্যারহাউস, ওপেন ইয়ার্ড, ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়েব্রিজ, দ্বিতল অফিস ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়।
আমদানিকারকরা জানান, যেসব পণ্য আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় পক্ষের অনীহার কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না। নাকুগাঁও বন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে ভারতের আসামের জগির রোড এলাকায় এশিয়ার সবচেয়ে বড় শুঁটকি মাছের বাজার। এই শুঁটকি আমদানি করতে এখানকার ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় কাস্টমসের অসহযোগিতার কারণে তারা তা আনতে পারেন না। এ ছাড়া তাজা ফলমূল, আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতেও একই সমস্যা। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ছাড়া এ বন্দরের গতি ফেরানো সম্ভব না বলে মনে করেন তারা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ কোটি ১৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এ ছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেছে।
বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, শেরপুরসহ এই অঞ্চলে শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই বন্দর দিয়ে শুঁটকি, কয়লা, পাথর, সুপারি, ফলমূল, ফ্লাই অ্যাশসহ অন্যান্য পণ্যও আনতে এখানকার আমদানিকারকরা আগ্রহী। অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বন্দরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে এই বন্দরের গতি বাড়বে।
বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) জাহিদুল ইসলাম বলেন, নাকুগাঁও স্থলবন্দরে এখন শুধু পাথর আসছে। একটি পণ্য আমদানি করে বন্দরের রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব না। 
শেরপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারী কমিশনার ফরিদুল আলম বলেন, নাকুগাঁও স্থলবন্দরের কাছাকাছি মেঘালয় ও ভুটান থাকায় সহজেই পাথর আসে। ব্যবসায়ীরা চাইলে  কমিশনারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারে।

আরও পড়ুন

×