ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

পাহাড় ঢালে দৃষ্টিনন্দন খেজুর বাগান

পাহাড় ঢালে দৃষ্টিনন্দন খেজুর বাগান

নিজের খেজুর বাগান পরিচর্যা করছেন কৃষি উদ্যোক্তা আবুল সৈয়দ। রাঙ্গুনিয়ার হালদীছড়ার এই বাগানে রয়েছে প্রায় ৪০০ খেজুর গাছ সমকাল

 মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) 

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৩

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আরব দেশগুলোতে থাকা বাগানের আদলে পাহাড়ের ঢালে দৃষ্টিনন্দন এক খেজুর বাগান গড়ে তুলেছেন কৃষি উদ্যোক্তা আবুল সৈয়দ। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে থাকাকালে খেজুর বাগান দেখে তিনি এমনই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, দেশে ফিরে সেই রকম করে খেজুর বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন তিনি। এর পর গত ১৩ বছর ধরে তিলে তিলে উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার হালদীছড়া নামক স্থানে প্রায় ৪০০ খেজুর গাছসমৃদ্ধ বাগানটি গড়ে তোলেন তিনি। বাগানের একদিকে পাহাড়, তার ঢালুতে বিস্তীর্ণ বিলের পাশে সারি সারি খেজুর গাছ জায়গাটিকে এমনই দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে, এটি এখন রাঙ্গুনিয়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছে জনপ্রিয় পিকনিক স্পট।  

সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ধামাইরহাট বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দুর্গম পথ পেরিয়ে পূর্ব নিশ্চিন্তাপুর হালদীছড়া নামক স্থানে এর অবস্থান। প্রায় সাত একর পাহাড় আর সমতলজুড়ে বিস্তৃত এ বাগানে সারি সারি খেজুর গাছ ছাড়াও রয়েছে আম, পেয়ারা, বরই, লিচু, কলা, কমলা, লেবু ও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। পাশে রয়েছে বিশাল পুকুর, সেখানে 
চাষ করা হয় মাছ। তার পাশে খেজুর পাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সুন্দর ঝুপড়ি ঘর। যেখানে রয়েছে দুটি লাকড়ির চুলা। জানা গেল, শীতে খেজুর রস সংগ্রহের পর ওই চুলাতেই সেদ্ধ করে জীবাণুমুক্ত করার পর তা বাজারজাত করা হয়। 

উদ্যোক্তা আবুল সৈয়দ জানান, শীতের মৌসুমে রসের ব্যাপক চাহিদার কারণে এই খেজুর বাগানের কদর এখন আকাশচুম্বী। রস পেতে হলে ১০-১৫ দিন আগে সিরিয়াল দিতে হয়। দেশি জাতের এসব খেজুর গাছ তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর আগে লাগিয়েছেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে লাগিয়েছেন বিদেশি জাতের আরও ৫০টি খেজুর গাছ। বর্তমানে বাগানে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি গাছে রস পাওয়া যাচ্ছে। গাছগুলো এ বছর পরিপক্ব হওয়ায় প্রতিদিন অন্তত দুই মণ রস পাওয়া যাবে। বাগানটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মূলত রান্নার সব সুবিধা থাকায় বাগানে অনেকে পিকনিক করতে আসছেন। 
আবুল সৈয়দ আরও বলেন, খেজুর গাছ একসময় আমাদের আশপাশে সর্বত্র দেখা যেত। কিন্তু দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে। দেশি জাতের খেজুর গাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় এই বাগান করেছি। ইতোমধ্যে ২০ থেকে ৩০টি গাছ থেকে রস পাচ্ছি। গাছে যেসব দেশি খেজুর ধরছে, সেগুলোও শহরে বিক্রির কথা হয়েছে। বিদেশি খেজুরের ফলন এবং 
সব গাছের রস সংগ্রহ হলে দৈনিক কয়েক মণ রস পাওয়া যাবে। প্রতিদিন আমি ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বাগানে কাজ করি। দেখাশোনার জন্য আরও কয়েকজন কর্মরত আছেন। খেজুর গাছ বিলুপ্তির 
হাত থেকে রক্ষায় যারা এই ধরনের বাগান করতে চান, তাদের আমি বিনামূল্যে চারা এবং পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করব। 
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, খেজুর গাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় আবুল সৈয়দের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তাঁকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×