ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

নতুন সাজে জাতীয় স্মৃতিসৌধ

নতুন সাজে জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স সংস্কারের কাজে ব্যস্ত কয়েকজন কর্মী। দূরে দাঁড়িয়ে সার্বিক বিষয় তদারক করছেন কর্মকর্তারা। শুক্রবার ঢাকার সাভারে সমকাল

 গোবিন্দ আচার্য্য, সাভার

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১০ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৯:২১

আর মাত্র এক দিন পরই ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। এ দিবস উদযাপনের জন্য ধুয়েমুছে সাফ করা হচ্ছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। রংতুলির আঁচড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি বাহারি ফুলের গাছ দিয়ে নতুন করে সাজানো হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের এই স্মৃতির প্রতীক।  লেক সংস্কার, সীমানা প্রাচীরের কাজও চলছে। গতকাল শুক্রবার স্মৃতিসৌধের চারপাশসহ গোটা এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেচে। ইতোমধ্যে স্মৃতিসৌধের ভেতর জনসাধারণের আনাগোনায়ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও বিশিষ্টজন। এর পরই সৌধ প্রাঙ্গণে ঢল নামবে সাধারণ মানুষের। তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে শহীদ বেদি।
শুক্রবার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার কেউ করছেন রঙের কাজ, কেউবা ইটের। কোনো কর্মী ঝাড়ু দিয়ে ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করছেন, কেউ পানি দিয়ে পুরো সৌধের ভেতর ধোয়ামোছার কাজ করছেন। এরই মধ্যে নানা রঙের বাহারি ফুলে ঢেকে গেছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। চত্বরের সিঁড়ি ও নানা স্থাপনায় পড়েছে রংতুলির আঁচড়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।
পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত আমিনুল বলেন, ১৬ ডিসেম্বর সামনে রেখে এক মাস আগে থেকেই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়। তিনি কাজ করছেন ১০ দিন ধরে। দিনপ্রতি ৬০০ টাকার বিনিময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন আমিনুল। তিনি বলেন, এখানে কাজ করতে অনেক ভালো লাগে। বাইরে কাজ করলে একেক দিন একেকজনের সঙ্গে কাজ করতে হয়। কিন্তু এখানে একটানা ১০ দিন ধরে কাজ করায় সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্কও হয়েছে। এ ছাড়া দিনের পারিশ্রমিক দিনেই পাচ্ছেন।

ফুল গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন আব্দুল মতিন। তাঁর ভাষ্য, মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন স্থানের শোভা বাড়াতে ফুলের গাছসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করা হচ্ছে। এখানে লাখ লাখ মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। এটি ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতি লাগে তাঁর।
৪২ বছর ধরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় হাতে লেখার কাজ করে আসছেন জিএম আনোয়ারুল ইসলাম। ১৯৮১ সাল থেকে নিয়মিত এ কাজে আসছেন তিনি। প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ সব জাতীয় দিবসে স্মৃতিসৌধের জন্য কাজ করতে হয়। এবার ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকেই লেখালেখির কাজ শুরু করেছেন আনোয়ারুল ইসলাম। যদিও বয়স হয়ে যাওয়ায় পরিবারের নিষেধ রয়েছে। কিন্তু ভালো লাগা থেকেই এখানে লেখালেখির কাজ করেন বলে জানান আনোয়ারুল ইসলাম।

অন্যদিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসা দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় এবারও বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও থাকবেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও বিদেশি কূটনীতিকসহ লাখ লাখ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে আসবেন। এ জন্য দেড় মাস আগে গণপূর্ত অধিদপ্তর কাজ শুরু করে। পুরো স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স ধুয়েমুছে পরিপাটি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফুল দিয়ে সাজানো, রংতুলির কাজ, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে।

আরও পড়ুন

×