অনুপ্রবেশের সময় আটক বাংলাদেশি কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
কিছুই জানেন না দাবি বাবা-মায়ের

ছবি: সমকাল
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:০৩
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর বিএসএফের হাতে আটক পঞ্চগড়ের কিশোরী প্রিয়ন্তী রায় প্রমিকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রমির বাবা-মা। বিষয়টি নিয়ে রোববার প্রেস ব্রিফিংও করেছেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি। প্রমির পরিবারকে ইসকন-ভক্ত দাবি করে বাংলাদেশে অনিরাপদ বোধ করায় মেয়েকে তার বাবা-মা ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এমন ঘটনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং প্রপাগান্ডা উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশ সুপার। ভারতে আটক কিশোরী প্রমি পঞ্চগড় জেলা শহরের উত্তর জালাসি পাড়ার দম্পতি জয়দেব চন্দ্র রায় ও অনুরাধা রানী রায়ের মেয়ে।
প্রমির পরিবারের দাবি, গত ৯ ডিসেম্বর দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে মামাবাড়ি বেড়াতে যায় সে। ওইদিন রাতেই অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢোকে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। মূলত চোখের সমস্যার চিকিৎসা করাতে ভারতে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু পরদিন ভোরে অবৈধ অনুপ্রবেশের সময় তাকে আটক করে বিএসএফ। পরে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার চপড়া থানা পুলিশের কাছে বিএসএফ তাকে হস্তান্তর করে। সেখান থেকে প্রমিকে ভারতের একটি আদালতের নির্দেশে নেওয়া হয় সেইফ হোমে।
এর মধ্যেই প্রমিকে আটকের পর একটি ভিডিও ভারত থেকে গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। সেই ভিডিওর সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের আর বাংলাসহ একাধিক গণমাধ্যমে করা হয় মিথ্যা প্রতিবেদন। ভিডিওতে প্রমির নাম বদলে দেওয়া হয় অর্পিতা। প্রচার করা হয়, অর্পিতার পরিবার ইসকন-ভক্ত। তার বাবা একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন। এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত, মা খুবই অসুস্থ। বাংলাদেশ তাদের জন্য অনিরাপদ, তাই তারা মেয়েকে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ভিডিওতেই প্রমির বক্তব্য ছিল না।
বিষয়টি পঞ্চগড়ে জানাজানি হলে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তের পর পুলিশের দাবি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের একটি মহল গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। প্রমির এক আত্মীয়ের বানোয়াট বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খোদ তার পরিবার।
প্রমির বাবা কিছুদিন আগে স্ট্রোক করলেও বর্তমানে তিনি সুস্থ রয়েছেন। কিন্তু প্রমি ভারতে কীভাবে গেল, তা জানে না বলে দাবি পরিবারের। মেয়েকে ফেরত পেতে তারা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন। রোববার পুলিশ সুপারের ব্রিফিংয়ে প্রমির মা অনুরাধা রানী রায় বলেন, ‘গত সোমবার আমার মেয়ে আমাদের কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তবে ভারতে সে কীভাবে গেল জানি না। আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই। রোববার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসেছি। আমার মেয়েকে নিরাপদে ফেরত পেতে আবেদন জানিয়েছি।’
প্রমির বাবা জয়দেব চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার মেয়ের চোখের সমস্যা। একবার তাকে ভারতে চিকিৎসক দেখিয়েছিলাম। আবার চিকিৎসক দেখানোর দরকার ছিল। কিন্তু ভিসা পাইনি। এখন দেখছি, ভারতে সে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছে। এখানে আমাদের ওপর কোনো নির্যাতন কিংবা অত্যাচারের ঘটনা ঘটেনি। ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে। আমার মেয়ে তো অত্যাচার বা এমন কোনো কথা বলেনি সেখানে। সেখানকার সাংবাদিকরা মিথ্যাচার করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
পঞ্চগড় সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন রায় বণিক বলেন, পঞ্চগড়ে কোনো হিন্দুর ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনাই ঘটেনি। কেউ পালিয়ে ভারতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি ভারতীয় গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, ঘটনাটি জানার পরে আমি প্রমির বাড়িতে পুলিশ পাঠাই। পরে সেখানে গিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের কোনো সত্যতা মেলেনি। আমরা তাদের মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
- বিষয় :
- পঞ্চগড়
- ভারত
- অনুপ্রবেশকারী