ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বন্ডে পণ্য আমদানিতে ৫২৭ কোটি টাকার কারসাজি

এস আলম গ্রুপের আরেক অনিয়ম

বন্ডে পণ্য আমদানিতে ৫২৭ কোটি টাকার কারসাজি

ফাইল ছবি

 সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১৪

বন্ডে পণ্য আমদানিতে ৫২৭ কোটি টাকার নতুন অনিয়ম ধরা পড়েছে এস আলম গ্রুপের। কাস্টমস আইন অনুযায়ী, বন্ডে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্তির আগেই পরিশোধ করতে হয়। করতে হয় ইন টু বন্ডও। তবে চিনি তৈরির এক লাখ টনের বেশি কাঁচামাল আমদানিতে এর কোনো নিয়মই মানেনি চট্টগ্রামভিত্তিক গ্রুপটি। এজন্য গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ দাবিনামা ইস্যু এবং মামলা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে গ্রুপের ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেখানেও আছে এই রিফাইন্ড সুগার।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, বন্ডের মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে ছয় মাস পর শুল্ক পরিশোধের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। তবে কাস্টমস থেকে পণ্য খালাসের সময় শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। পণ্য খালাসের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা নথিভুক্ত বা ইন টু বন্ড করার নিয়মও রয়েছে। এই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ওই পণ্য খালাস করে নিয়ে যায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার। ৫২৭ কোটি টাকার চালানগুলো আসে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে।

চট্টগ্রাম বন্ড কাস্টমসের সদ্য বিদায়ী কমিশনার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর এক অফিস আদেশে এস আলম রিফাইন্ড সুগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জরিমানাসহ সব শুল্ক-কর পরিশোধের নির্দেশ দেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন উপকমিশনার শাহেদ আহমেদ এ আদেশের অনুলিপি পাঠান কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট, এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক, রপ্তানি ও বন্ড), চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিসের প্রোগ্রামার ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে।
এ ছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকটি চালানে একই ধরনের অনিয়ম পেয়েছে বন্ড কমিশনারেট অফিস। এর মধ্যে একটি চালান আছে ২০৫ কোটি টাকার। আরেকটি ৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 
এ বিষয়ে এস আলম রিফাইন্ড সুগারের দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আদেশ পাওয়ার পর কিছু শুল্ক তারা জমা দিয়েছেন। গতকাল রোববার ৪৭ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে আরেক দফায় দিয়েছেন ৪৫ কোটি টাকা। 
আর শুল্কের সব টাকা জমা না হওয়া পর্যন্ত মামলাটি চলবে বলে জানিয়েছেন বন্ড অফিসের কর্মকর্তারা।

কাস্টমস অফিস থেকে জানা যায়, গত মার্চে ২৪৬ কোটি টাকার সাড়ে ৬০ হাজার টন চিনি তৈরির কাঁচামাল বন্ডের মাধ্যমে আনে এস আলম রিফাইন্ড সুগার। ১৭টি চালানে এ পণ্য আনলেও বন্ডিং মেয়াদ পার হওয়ার আগে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। একই ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে ২০৫ কোটি টাকার আরও ৯টি চালানে। এসব চালানে আনা হয় ৫০ হাজার টনের বেশি চিনি তৈরির কাঁচামাল। আরেকটি ঘটনায় ১৬টি চালানে আনা ৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার পণ্যের ইন টু বন্ড করেনি এস আলম গ্রুপ। এসব অনিয়মের কারণে ৫২৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
১৪১৪ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি আরও ১০ প্রতিষ্ঠানের এস আলম গ্রুপের ১০ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের তদন্তে। এর আগে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছিলেন তারা। এ নিয়ে গ্রুপটির ১২ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেল এনবিআর। 
ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া ওই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো এস আলম স্টিলস, চেমন ইস্পাত, এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এস এস পাওয়ার, এস আলম পাওয়ার প্লান্ট, এস আলম প্রোপার্টিজ, এস আলম কোল্ড রি-রোলিং মিলস, মাসুদ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস ও এস আলম সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ। 
এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি তদন্তে গত ১৯ আগস্ট ২০ সদস্যের কমিটি গঠন করে চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। তাদের তদন্তে এক মাস সময় দেওয়া হয়। দলটি এস আলমের প্রতিষ্ঠানগুলোর গত পাঁচ বছরের বেচাকেনা ও উৎপাদনের ওপর নিরীক্ষা করে এ ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

×