শহীদ মিনারে ভাগাড়

ধোবাউড়া বাজারে পুরাতন থানার সামনে পরিত্যক্ত শহীদ মিনার সমকাল
হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪১
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া বাজারে পুরাতন থানার সামনে শহীদ মিনার। ভাষাসৈনিকদের আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন। শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর গর্বিত স্থান। অথচ রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষেও তা করা হয়নি পরিষ্কার। দেওয়া হয়নি কোনো ফুল।
ধীরে ধীরে শহীদ মিনারের পাশে স্থাপনা গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলা শুরু হয় শহীদ মিনারে। ফলে এটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। স্থানীয়রা ধোবাউড়া উপজেলা প্রশাসনকে জানালে মেলে আশ্বাস। তবে আজ পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি এই শহীদ মিনারটি।
গতকাল রোববার সকালে ধোবাউড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনারের দুই পাশে দোকান, বাড়িঘর। সামনের অংশ ফাঁকা। মাঝখানে থাকা শহীদ মিনারে আবর্জনার স্তূপ।
বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধোবাউড়া বাজারে ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১১০ টাকা ব্যয়ে আব্দুর রহিম, আবুল ফজল তালুকদার, মকবুল হোসেন খানসহ কয়েকজন উদ্যোগ নিয়ে এই শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। শুরুতে বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা এটিতে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন।
১৯৯১ সালে বর্তমান উপজেলা পরিষদের পাশেই শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় এটির গুরুত্ব হারায়। পরে পুরাতন শহীদ মিনারের দুই পাশ ঘেঁষে বাড়িঘর তৈরি হয়। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে শহীদ মিনারটি। তখন থেকে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ মিনারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিবানন্দখিলা গ্রামের আবুল ফজল তালুকদার বলেন, ‘১৯৬৯ সালে আমরা তিনজন মিলে বালু সিমেন্ট দিয়ে এই শহীদ মিনার তৈরি করেছিলাম। উপজেলার এটাই প্রথম শহীদ মিনার। এখানে সব ধরনের অনুষ্ঠান হতো। এখন ময়লা ফেলে লোকজন। এসব দেখে অনেক কষ্ট লাগে।’ তাঁর দাবি, উপজেলা প্রশাসনকে কয়েকবার বলা হয়েছে। তারা বলেছেন দেখবেন। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। কবে মারা যাই ঠিক নাই। এখানে নতুন একটি শহীদ মিনার দেখতে পারলে আমার মনটা শান্তি পেত।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী খোকন মিয়া জানান, দুই পাশে ঘর তৈরি হওয়ায় শহীদ মিনারটি আড়ালে চলে যায়। এখানেই মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলতে থাকে। এটি একটি শ্রদ্ধার জায়গা। এখানে এভাবে আবর্জনা ফেলা ঠিক না।
হরচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। শহীদ মিনারে এভাবে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকা শহীদদের অমর্যাদার শামিল। শহীদ মিনারটি সরিয়ে অন্যত্র নেওয়ার জন্য অনেক দিন থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই করা হচ্ছে না।’
ধোবাউড়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মুকুলের ভাষ্য, বিষয়টি জানার পর বাজারের লোকজনকে ময়লা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কথা শুনছেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, শহীদ মিনারটি সরিয়ে অন্যত্র স্থাপনের বিষয়ে লোকজন আমাকে জানিয়েছেন। আগামী সমন্বয় সভায় সকলের সঙ্গে আলোচনা করে শহীদ মিনারের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।
- বিষয় :
- শহীদ মিনার