ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

দাম বাড়াতে সারে কৃত্রিম সংকট

দাম বাড়াতে সারে কৃত্রিম সংকট

পেঁয়াজের জমিতে সার ছিটাচ্ছেন এক কৃষক। সম্প্রতি চারঘাটের সরদহ ইউনিয়নের ঝিকরা এলাকায় সমকাল

সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫২

কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রাজশাহীর চারঘাটে ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। কিন্তু কোনো রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবাদ করলে সার বিক্রি করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নন্দনগাছী বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ী ভূগোল আলী বলেন, সারের জন্য গেলে সরবরাহ নেই বলে ডিলার নজরুল ইসলাম কয়েকদিন ধরে ঘোরাচ্ছেন। অথচ বাড়িতে গোডাউন বানিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। সার না পাওয়ায় কলা ও পেঁয়াজের আবাদ বন্ধ হয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি একাধিকবার জানিয়েছি, কাজ হয়নি। 
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএডিসির সার ডিলার নজরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, বরাদ্দ থাকলেও বিএডিসি সময়মতো সরবরাহ করে না। এ জন্য তারা কৃষকদের যথাসময়ে দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বিসিআইসি ডিলারের কাছ থেকে কিনে দেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগে কেউ কেউ বেশি দামে বিক্রি করলেও তিনি ন্যায্য মূল্যই নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রবি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে গম, ৭০০ হেক্টর জমিতে আখ, ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, আলু ২২৫ হেক্টর, সরিষা ৭৯০ হেক্টর, পেঁয়াজ ৯১০ হেক্টর, রসুন ৫৫০ হেক্টর, মশুর ৬৮৫ হেক্টরসহ প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ করা হচ্ছে। এই জমি আবাদ করতে ১৯২ টন টিএসপি, ২১৫ টন এমওপি, ৪২০ টন ডিএপি এবং ৬৬৮ টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন। সমপরিমাণ সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএডিসি)।
বিএডিসির রাজশাহীর যুগ্ম পরিচালক (সার) জুলফিকার আলী বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরে সারের চাহিদা বেশি থাকে। শত শত ট্রাক লোড-আনলোড করতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও একবারে সব উপজেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। তাই কয়েক দফায় ডিলারদের দেওয়া হচ্ছে। তবে নভেম্বর মাসের বরাদ্দের সার দিয়েই ডিসেম্বর মাসের শুরুতে চলার কথা। বাজারে সারের সংকট হওয়ার কারণ নেই।
জানা গেছে, বরাদ্দ সার বিসিআইসির সাতজন এবং বিএডিসির ১৫ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) টিএসপি ও ইউরিয়া সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ৩৫০ টাকা (২৭ টাকা কেজি), মিউরেট অব পটাশ প্রতি বস্তা ১ হাজার টাকা (২০ টাকা কেজি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) প্রতি বস্তা ১ হাজার ৫০ টাকা (২১ টাকা কেজি) নির্ধারণ করে দিয়েছে।
উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি টিএসপি ২৭ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ সারের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা টিএসপি সার ৩২ থেকে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন। যারা বেশি টাকা দিতে পারছেন না, তাদের সরবরাহ নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সরদহ এলাকার সুলেখা খাতুন বলেন, টিএসপি সার কিনতে তিন দিন ডিলারের কাছে গিয়েও পাইনি। শুনছি বেশি দাম দিলে তারা গোডাউন থেকে এনে দিচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় সেগুলো বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা হারে বেশি দামে বিক্রি করছে তারা।
পাইটখালী গ্রামের কৃষক রায়হান আলী বলেন, পেয়ারা বাগান, রসুন ও পেঁয়াজের জন্য টিএসপি সার প্রয়োজন। সারের জন্য ডিলারের কাছে গেলে সরবরাহ নেই বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরে ৩৬ টাকা কেজি দরে সার কিনেছি। ডিলার রসিদ দেননি। কেজিতে ৯টা বেশি দিয়ে সার কিনলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। সেই অনুযায়ী ফসলের দাম পাওয়া কঠিন হবে বলে জানান এই কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ডিলারদের কাছে বসে থেকে সার বিক্রির বিষয়টি তদারক করছেন। তার পরও দাম বেশি নেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, টিএসপি সারের তুলনায় ডিএপি সার বেশি কার্যকরী। এ সারের বরাদ্দও টিএসপির দ্বিগুণ। কৃষকদের এ সার ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও তারা শুনছেন না।

আরও পড়ুন

×