ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লামায় অগ্নিকাণ্ড

জুমঘরে আগুন দেওয়ার নেপথ্যে চাঁদা

নিন্দা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ও দুই সমন্বয়ক

জুমঘরে আগুন দেওয়ার নেপথ্যে চাঁদা

ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক ও লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:২১

বান্দরবানের লামা উপজেলায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি পাড়ায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বান্দরবানের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তাররা ইতোমধ্যে ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, চাঁদা না পেয়ে তারা এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তত দু’জন সমন্বয়ক। উপদেষ্টা পুড়ে যাওয়া ঘর পুনর্নির্মাণসহ সব ধরনের সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য। 

গ্রেপ্তাররা হলো– লামার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জগমন ত্রিপুরার ছেলে স্টিফেন ত্রিপুরা ও যোয়াকিম ত্রিপুরা, একই ওয়ার্ডের তঙ্গাঝিরিপাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে মশৈম্যা ত্রিপুরা ও ওমর আলীর ছেলে ইব্রাহিম।

এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা অগ্নিকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আদালতের অনুমতি চাওয়া হবে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
 
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীদের একজন গুঙ্গামণি ত্রিপুরা। তিনি জানান, অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। এ টাকা দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের রাতে ১৬ থেকে ১৭টি জুমঘর (খামারবাড়ি) পুড়িয়ে দেয়। ভুক্তভোগীদের ক্ষতির পরিমাণ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা হবে বলে জানান তিনি।
 
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস কোম্পানি সমকালকে বলেন, এই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বেতছড়া তঙ্গাঝিরি এলাকাটি পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের দখল করা জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত এলাকাটি ‘এসপির বাংলো’ নামে একটি রেস্টহাউস আছে। সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের পালিয়ে যাওয়ার পর লামা ও আলীকদমের ভূমিহীন জুমিয়া ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৬-১৭টি পরিবার জায়গাটি দখলে নিতে অস্থায়ী জুমঘর (খামারবাড়ি) তৈরি করে। তাদেরই আরেকটি গ্রুপ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। 

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, বড়দিন উপলক্ষে বুধবার রাতে পাশের তঙ্গাঝিরিপাড়ায় অনুষ্ঠান চলছিল। পূর্ব বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। তখন আগুনে বেতছড়া পাড়ার ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে যায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগী  গুঙ্গামণি ত্রিপুরার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে মামলার সাত এজাহারভুক্ত আসামির চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
লামার তঙ্গাঝিরি ত্রিপুরাপাড়ায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া ঘর পুনর্নির্মাণসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মকর্তারা গেছেন; সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা করেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।
 
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের দুই যুগ্ম সমন্বয়কারী মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন এবং অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।

আরও পড়ুন

×