পড়ে ছিল রক্তাক্ত লাশ, ছুরি হাতে পালাল যুবক

ছবি: সমকাল
ফেনী সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:৪৪
ফেনী পৌরসভার ফলেশ্বর থেকে এক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যার পর এক যুবককে ছুরি হাতে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। চব্বিশ ঘণ্টা পার হলেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
নিহত মাসুদা বেগম (৬৫) ফেনী সদর উপজেলার পিঠাপাশারীর মোস্তফা ভূঁঞা বাড়ির সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তাঁর এক মেয়ে ও চার ছেলে রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক মজুমদারের বাড়ির গৃহপরিচারিকা ছিলেন। তাঁর লাশ পড়ে ছিল ফারুকের ভাই গোলাম কিবরিয়া বকুলের বাসার সোফার নিচে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, গোলাম কিবরিয়া বকুলের ঘরে কাজ করার জন্য গত সোমবার মাসুদা বেগমকে ডেকে আনা হয়। ঘটনার সময় মাসুদা ছিলেন চারতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে। পরিবারের বাকিরা ছিলেন ওপরের তলায়। রাতে নিচতলায় চিৎকার শুনে ওপর থেকে নেমে আসেন কিবরিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার। এ সময় নিচতলার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে অন্যদের ডাকতে তিনি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন। সুযোগ বুঝে রক্তাক্ত ছুরি নিয়ে এক যুবক ওই ঘর থেকে পালিয়ে যায়। ফের ওপর তলা থেকে কয়েকজন নিচে নেমে আসে। ঘরের সোফার নিচে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে তারা চিৎকার করে। আশপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়। থানা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
আজ দুপুর পৌনে ২টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নিহত মাসুদার পুত্রবধূ রাহেনা আক্তার জানান, ২০ বছর ধরে শাশুড়ি গোলাম ফারুক ও গোলাম কিবরিয়ার ঘরে কাজ করছেন। সোমবার ওই বাড়ির লোকজন ঢাকা থেকে বাড়ি এলে তাঁকে কাজের জন্য ডেকে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শাশুড়ির চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ ও পান কিনে দিয়ে পুত্রবধূ বাড়ি চলে যান। রাতে ফারুক কমিশনারের স্ত্রী মোবাইল ফোনে তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। বারবার কারণ জিজ্ঞাসা করলেও কিছু বলেননি। পরে গিয়ে দেখেন, ঘরের সোফার নিচে শাশুড়ির রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে।
গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা দুই জা মিলে ভবনের তৃতীয় তলায় ছিলাম। হঠাৎ আওয়াজ শুনে নিচে এসে ভেতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়েছি। মাসুদাকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোর-ডাকাত সন্দেহে বাড়ির অন্যদের জানানোর জন্য ওপরে উঠলে দরজা খুলে দৌড়ে এক যুবক পালিয়ে যায় বলে শুনেছি।’
নিহতের মেয়ে শাহেনা আক্তার বলেন, ‘এই খবর শুনে বিশ্বাস করতে পারছি না। মা হত্যার বিচার চাই।’
নিহতের ভাগনে কামাল উদ্দিন বলেন, ‘খালাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’
সাবেক কাউন্সিলর গোলাম ফারুক মজুমদার বলেন, ‘বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আমি চা দোকানে বসা ছিলাম। বাসা থেকে মোবাইল ফোনে খবর পেলাম, চোর-ডাকাত ঢুকেছে। খবর পেয়ে দৌড়ে বাসায় উঠে দেখি রক্ত।’
বাড়ির আরেক মালিক গোলাম হায়দার মজুমদার ঝন্টু বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যার বিচার চাই।’
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। নিহতের দুই কান কাটা, মুখ, চোয়াল, গলাসহ একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ শাখা (ডিএসবি), পিবিআই ও সিআইডি বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও তদন্ত শুরু করেছে। ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টা ১৩ মিনিটে কালো প্যান্ট ও সাদা চেক শার্ট পরা অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক ভবনে প্রবেশ করছে। আবার ৯টা ১৭ মিনিটে ওই যুবক ভবন থেকে ছুরি হাতে দৌড়ে বের হয়ে যায়। ওই যুবককে শনাক্তে কাজ চলছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।