ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

খোয়াই নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন চলছেই

খোয়াই নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন চলছেই

হবিগঞ্জের যশেরআব্দা পয়েন্টে খোয়াই নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন চলছে সমকাল

 হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩২

হবিগঞ্জ শহরের গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদী আরও আগেই তার জৌলুস হারিয়েছে। বেদখল আর অবৈধ বালু ও মাটিখেকো চক্রের থাবায় বিপন্ন এই নদী। এখনও অসাধু চক্রের এই তাণ্ডব চলমান।
খোয়াই নদী, তীর এবং নদীসংলগ্ন বাঁধের গোড়া থেকে অবাধে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে আসন্ন বর্ষায় হবিগঞ্জ শহর বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, বাঁধের গোড়া থেকে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, এতে শহর রক্ষা বাঁধটি ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে গোটা হবিগঞ্জ শহর।
শুধু হবিগঞ্জ শহরই নয়, বর্ষার সময় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জেলার হাওরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ বোরো ফসলি জমির। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধভাবে যারা নদী ও এর তীরবর্তী বাঁধের অংশ থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সচেতন শহরবাসী। 
খোয়াই নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর মশাজান পয়েন্ট থেকে যশোরআব্দা পর্যন্ত একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নদীর চর থেকে অবাধে কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি। যেগুলো ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে পরিবহন করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। নদীর চর এমনভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে, যেন দেখলে মনে হয় নদীর ভেতর বড় বড় পুকুর খনন করা হয়েছে।
যশেরআব্দা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকায় খোয়াই নদীর ভেতরে চারটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর বাঁধ কেটে মাটির নিচ দিয়ে বালু নেওয়ার পাইপ প্রবেশ করানো হয়েছে লোকালয়ের ভেতরে। ড্রেজারগুলোর পাশেই নদীর দুই পাড়ে ছয়টি ট্রাক্টর নামিয়ে বাঁধের গোড়ার মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম মিয়া জানান, যশোরআব্দা পয়েন্ট থেকে গেল কয়েক বছর ধরেই প্রতিনিয়ত বালু-মাটি কেটে নিচ্ছে একটি চক্র। গ্রামবাসী বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
শাহজাহান মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, একদিকে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে, অপরদিকে মাটি ও বালুবোঝাই ভারি ট্রাক্টর শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে শহর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
আব্দুল মান্নান নামে শহর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, মশাজান পয়েন্ট, মাছুলিয়া ব্রিজ পয়েন্ট, চৌধুরী বাজার পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে বালু ও মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
হবিগঞ্জের বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, মানুষের অব্যাহত নির্যাতনে খোয়াই নদীর তলদেশে অবকাঠামোগত পরিবর্তন পানির ধারণক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। বালু ও মাটি উত্তোলন করে খোয়াই নদীকে এমন অবস্থায় নেওয়া হয়েছে যে, বর্ষা এলেই শহর তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ঘুম হারাম হয়ে যায় এলাকাবাসীর। নদীতে প্রাণ-প্রকৃতির সিংহভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তার পরও প্রশাসনের নীরব থাকা দুঃখজনক।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রিয়াংকা পাল জানান, হবিগঞ্জ সদর অংশে একটিই বালুমহাল ইজারা দেওয়া আছে। অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
 

আরও পড়ুন

×