বুড়ি তিস্তার পার কেটে প্রকৌশলীর পুকুর ভরাট
উলিপুর উপজেলার পৌরসভার কাজির চক ডাক্তারপাড়া গ্রামে করতোয়া নদীসংলগ্ন বুড়ি তিস্তার পার ভরাট করা হচ্ছে পুকুর। ছবি: সমকাল
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:১২
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বুড়ি তিস্তা নদীর পার কেটে পুকুর ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশলী সামিউর রহমানের বিরুদ্ধে। পৌরসভার কাজির চক ডাক্তারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে বন্যার সময় দুই পারের আবাদি জমি জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে থাকবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
ভুক্তভোগী কৃষক মোকছেদ আলী বলেন, তিস্তাপারের একবিঘা জমিতে আবাদ করা ফসল দিয়ে কোনোরকমে বছরের পেট চলে। যেভাবে নদীর পার কাটা হচ্ছে, তাতে বর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। ফসল আবাদ হবে না। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এরপরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা ফসল আবাদ করা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
একই অভিযোগ নুর ইসলামের। তিনি বলেন, তিস্তাপারের এ জমিটুকুই সম্বল। যে ফসল পাই, তা দিয়ে সংসার চলে। পার কাটার ফলে তার পুরো জমিই সারাবছর জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকবে। ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বলেন, প্রকাশ্যে দেদার নদীর পার কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে শুধু বর্ষার সময়ই নয়, সারাবছরই জমি জলাবদ্ধ থাকবে। ওই এলাকায় কোনো আবাদ হবে না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়ি তিস্তা নদী পুনর্খনন ও সংস্কার করে। চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল থেকে উলিপুরের থেতরাই পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা তিস্তার দুই পারের হাজার হাজার একর জমি জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত হয়। ফলে তিস্তাপারের কৃষকরা বছরের দুটি আবাদ নিশ্চিতে করতে পারছেন। কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে শুধু কাজির চক নয়, অনেক এলাকায় নদীপারের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী মো. সামিউর রহমান বলেন, ‘নদীর পারটি সম্পূর্ণ আমার জমিতে। আমি আমার জমি থেকে মাটি নিচ্ছি। নদীর পার কাটার অভিযোগ সঠিক না।’
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল বলেন, ‘তিস্তার পার কাটার বিষয়টি জেনে বাধা দিয়েছি। তারা শোনেনি। পার কাটার কারণে প্রচুর জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে। ওই এলাকায় আমি ফসল আবাদ করতে পারব না। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন, অভিযোগ হয়তো আগের ইউএনওর কাছে দেওয়া হয়েছে। আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, অনেকের জমি নদীর পারে পড়েছে। এ কারণে কেউ কেউ পার কাটছে বলে জেনেছি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- কুড়িগ্রাম