ঢাকা শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

‘ভোক নাগলে কায়ও দেখে না ঠান্ডায় কাঁপন সবায় দেখে’

‘ভোক নাগলে কায়ও দেখে না ঠান্ডায় কাঁপন সবায় দেখে’

উত্তরাঞ্চলে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বুধবার গাইবান্ধার বালাসী ঘাটে। ছবি: ফোকাস বাংলা

 রংপুর অফিস ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:৪৮

তীব্র শীতে উত্তরাঞ্চলের শ্রমজীবীরা বিপাকে পড়েছেন। গতকাল বুধবার সূর্যের দেখা মেলেনি। হাটবাজার ও রাস্তাঘাট দিনভর ছিল ফাঁকা। কাজে যেতে না পারায় খেটে খাওয়া মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে পার করছেন।

রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালেই নেমে এসেছে রাতের অন্ধকার। হালকা বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন। যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তিস্তাপারের ছালাপাক এলাকার বৃদ্ধ হামিদুর রহমান বললেন, ‘ঠান্ডায় সারা রাইত নিন (ঘুম) ধরে না। বউ-ছাওয়া নিয়া গাদাগাদি করি থাকি।’ একই এলাকার আশেক আলী বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি বাহে। প্যাটোত ভোক নাগলে কায়ও দেখে না। কিন্তু ঠান্ডায় থরথরি কাঁপন সবায় দেখে।’ 

প্রচণ্ড ঠান্ডায় চরাঞ্চলের অভাবী মানুষজন মাঠে কাজে যাওয়ার সাহস পাননি। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষও বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি।

রংপুরে প্রায় ৩ লাখ হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। প্রতিবছর শীতে তারা বর্ণনাতীত কষ্ট ভোগ করেন। এবারও শীত মোকাবিলায় তাদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি কম্বল কম এসেছে। এখন পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সেভাবে দাঁড়ায়নি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, নিম্ন আয়ের মানুষের শীত নিবারণে রংপুর অঞ্চলের আবহাওয়ার অবস্থা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র 
বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় আরও কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, রংপুরসহ আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। বুধবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫; সর্বোচ্চ ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মাসে রংপুর অঞ্চলে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।

কুড়িগ্রামেও জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের। ঘন কুয়াশার কারণে জেলা থেকে সব ধরনের যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। নদীতীরবর্তী অঞ্চলের শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।

উলিপুর হাতিয়ার বাসিন্দা করিম শেখ বলেন, ‘বাহে আইজকের ঠান্ডা সব থাকি বেশি। ঘর থাকি মানুষ বাইরে হবার নাগচে না।’ চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রপারের দোকানি মকবুল হোসেন বলেন, ‘আজ কয়েক দিন থাকি ঘন কুয়াশার কারণে বন্দরের নৌকা দেরি করে ছাড়ে, লোকজনও দেরি করে আসে। ঠান্ডাতে সকালের ব্যবসা কিছুটা ক্ষতি হইছে।’ তবে শীত নিবারণে এবার দুই ধাপে ১২ হাজার কম্বল ও ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা শাখা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্য দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিন এ অবস্থা চলতে পারে।

আরও পড়ুন

×