আপনানের অপেক্ষাটা অন্তহীন
সদ্য মা হারানো আপনান
ইকবাল হোসেন, মতলব (চাঁদপুর)
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০২:৪১
৯ মাসের আপনান খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে। এই বুঝি তার মা এলো। মায়ের জন্যই তার অপেক্ষা। দুধ খাওয়ার সময় হলেই মাকে খোঁজার আকুতি তার। কিন্তু আপনান জানে না, তার মা আর কখনোই ফিরবেন না। বখাটেদের ছোড়া এসিডে দগ্ধ হওয়ার ১০ মাসের বেশি সময় পর হার মেনেছেন তার মা মিলি আক্তার। সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা গেছেন তিনি।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে মিলির শ্বশুরবাড়ি। স্বামী আবু সায়েম প্রধান থাকেন সৌদি আরব।
বুধবার দুর্গাপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু আপনানের চোখেমুখে মায়ের জন্য অপেক্ষার ব্যাকুলতা। কোনো নারীকে দেখলেই মায়ের আদর পেতে চায় সে। নাতিকে কোলে নিয়ে আহাজারি করছিলেন নানি রাশেদা বেগম। তাঁর পাশে বসে বারবার চোখের পানি মোছেন মিলির শাশুড়ি শিখা বেগম, বোন শেফালী আক্তারসহ স্বজনেরা।
স্বজনেরা জানান, পশ্চিম সুজাতপুর গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুর্বৃত্তের ছোড়া এসিডে ঝলসে যান মিলি আক্তার। তখন তিনি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। এসিডে মিলির মুখ-বুক, পিঠ-হাতসহ শরীরের নানা অংশ দগ্ধ হয়। পরদিন থানায় মামলা করেন মিলির বাবা আইয়ুব আলী। এতে পাশের গ্রামের শফিকুল ইসলাম মানিক ও মো. জাহিদকে আসামি করেন।
শাশুড়ি শিখা বেগম বলছিলেন, মিলি তাঁর বড় ছেলের স্ত্রী। এসিডদগ্ধ হওয়ার পর ২ এপ্রিল ছেলেসন্তানের জন্ম দেন তিনি। তখন থেকেই নাতি আপনান রয়েছে তাঁর কাছে। রাশেদা বেগম মেয়ের মৃত্যুতে শোকাতুর। নাতি আপনানকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন, ‘যারা তোমাকে মায়ের দুধ খেতে দিল না তাদের কী বিচার হবে? কাকে মা ডাকবে আমার এই নাতিটা?’
মতলব উত্তর থানার ওসি রবিউল হক বলেন, এসিড নিক্ষেপের মূল পরিকল্পনাকারী মানিক ও তাঁর সহযোগী এসিড নিক্ষেপকারী জাহিদ এখন কারাগারে। মামলাটির চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
- বিষয় :
- চাঁদপুর