চট্টগ্রামে গত বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি চল্লিশোর্ধ্বের
ছবি: ফাইল
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৩:৪৯
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সদ্য সমাপ্ত বছরে ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী রোগীর। হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে দুই দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এসব রোগীর। তাদের একটি বড় অংশ পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় মশা মারার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অবহেলা ও গাফিলতিকে দায়ী করছেন লোকজন। ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতার অভাব এবং আক্রান্ত অনেককে দেরিতে হাসপাতালে আনায় মৃত্যু বেশি হওয়ার মূল কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডেঙ্গুতে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ ভাগের বেশি ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী। এর মধ্যে আবার নারীর সংখ্যা বেশি। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। তবে সেপ্টেম্বরে প্রাণ যায় ১১ জনের। পরের মাসে ৯ জনের মৃত্যু হয়। নভেম্বরে মৃত্যু হয়েছে রেকর্ড ১৬ জনের। ১ হাজার ৪৩০ জন আক্রান্ত হন অক্টোবরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৮ জনের শরীরে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব শনাক্ত হয় নভেম্বরে। গত বছর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৩ জন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘গত বছর ডেঙ্গুতে চল্লিশোর্ধ্ব রোগীর মৃত্যু হয়েছে বেশি। এর অন্যতম কারণ সচেতনতার অভাব। হাসপাতালে আমরা এই বয়সী এমন অনেক নারী-পুরুষ পেয়েছি, যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে চিকিৎসা নিয়েছেন। দেখা গেছে, এর মধ্যে অনেকে জ্বর নিয়ে নিজেদের মতো জীবন যাপন করেছেন। ওষুধ খেয়েছেন খেয়াল খুশিমতো। নির্ধারিত সময়ে যাননি ডাক্তারের কাছে। টানা কয়েক দিন জ্বরসহ নানা শারীরিক জটিলতা থাকার পরও করাননি ডেঙ্গু পরীক্ষা।’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘শেষ হওয়া বছরের মাঝামাঝি ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়। পরে প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে রোগীর চাপ। এর মধ্যে বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে দেরিতে আসার কারণে। দেখা গেছে, ভর্তি হওয়ার এক থেকে দুই দিনের মাথায় মৃত্যু হয়েছে বেশির ভাগ রোগীর।।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা মশা মারার ওপর জোর দিতে তাগাদা দিয়ে এসেছি। ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে বারবার বলেছি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে। হটস্পট এলাকায় মশা মারতে কাউকে দেখা না যাওয়ার অভিযোগ বেশির ভাগ বাসিন্দার। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য প্রশাসন শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল। সঠিক সময়ে মশা মারতে পারলে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আরও কম হতো।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক-চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে চসিক লোক দেখানো কাজই করেছে বেশি। একবার ওষুধ ছিটিয়ে গেলে তিন-ছয় মাসেও তাদের দেখা মেলেনি। সংস্থাটির গা-ছাড়া ভাবের কারণে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পরও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে তেমন বাস্তবমুখী উদ্যোগ দেখেননি নগরবাসী। এর খেসারত দিতে হয়েছে অনেককে। জবাবদিহি না থাকায় এমনটি হয়েছে।
নগরের পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘দিনে ও রাতে মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। মশার উপদ্রব বহু গুণ হলেও গত ছয় মাসে কাউকে ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।’