অরক্ষিত ৭ লেভেল ক্রসিং, দুর্ঘটনায় মরছে মানুষ
সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন রেলক্রসিং। ছবি: সমকাল
সোলায়মান হোসেন হরেক, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৪:০৮
সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতটি লেভেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, মরছে মানুষ। লেভেল ক্রসিংগুলোতে নেই কোনো গেটম্যান। রেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে কোনো কোনো ক্রসিংয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগালেও তা আর চোখে পড়ে না। অধিকাংশ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলায় যমুনা, অগ্নিবীণা ও জামালপুর এক্সপ্রেস নামে তিনটি আন্তঃনগর ও ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ৩৭ আপ, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সাময়িক বন্ধ রয়েছে। তবে ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ৩৮ ডাউন ট্রেন চলাচল করে। এ উপজেলায় রেলপথে ছোট বড় প্রায় ১৬টি রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯টিতে গেটম্যান আছে। বাকি সাতটি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। এসব ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। রেলওয়ের তালিকার বাইরেও অনেক লেভেল ক্রসিং রয়েছে। তবে সেগুলোর কোনো হিসাব নেই রেল কর্তৃপক্ষের কাছে। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।
অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেকে কোনো দিগ্বিদিক না তাকিয়েই ক্রসিং পারাপার হচ্ছে। সাধারণ মানুষের সাবধানতা ও রেল কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে কমতে পারে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেঁচিয়াবাঁধা এলাকার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সজীব নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে আরামনগর আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় দু’জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে লোকোশেড লেভেল ক্রসিংয়ে বিলকিস আক্তার নামে এক নারী ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। ২০১৮ সালে একটি ট্রাক্টর পৌরসভার বাউসি লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়ে। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাক্টরচালক নিহত হন। পরদিনই সাতপোয়া জামতলা মোড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন আরেকজন। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর সাতপোয়া জামতলা মোড়ে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ৫ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। অন্যান্য অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
তারাকান্দি এলাকার অটোরিকশার চালক হাসান মিয়া জানান, তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশন-সংলগ্ন এ লেভেল ক্রসিংটি সরিষাবাড়ী উপজেলার সবচেয়ে বড় রেলক্রসিং। এখানে আটটি রেললাইন রয়েছে। এত বড় লেভেল ক্রসিং থাকার পরও এটি অরক্ষিত। এখানে নেই কোনো গেটম্যান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন গাড়ি উল্টে যায়।
পৌর এলাকার সাতপোয়া জামতলা মোড়ের ইউনুস আলীর ভাষ্য, এই লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে একাধিকবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ তাঁর ছোট মেয়ে জারা ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়েছে। আমি চাই না আর কারও বুক খালি হোক। অতিদ্রুত এ লেভেল ক্রসিংয়ে গেট নির্মাণসহ গেটম্যান নিযুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গেটম্যান নিয়োগের বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত কাজ নয়। বিষয়টি দেখেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই, সেখানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া আছে। এ ছাড়া অরক্ষিত সব রেল ক্রসিংয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
- বিষয় :
- জামালপুর