মুন্সীগঞ্জ
আলুগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিক
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর হাসাইল গ্রামের একটি কৃষি জমিতে আলুগাছের পরিচর্যা করছেন শ্রমিকরা। বুধবার তোলা ছবি: সমকাল
কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মুন্সীগঞ্জ
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৪:১৩
মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে কৃষকের আলুগাছ পরিচর্যার কাজে ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের লক্ষাধিক শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে রোপণ করা আলু উত্তোলনে নামবেন কৃষকরা। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা জমিতে গজিয়ে ওঠা আলুগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। কোথাও আলু ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন কৃষক ও শ্রমিকরা। কোথাও গজিয়ে ওঠা গাছ পোকামাকড়ের কবল থেকে রক্ষায় কীটনাশক ছিটাচ্ছেন তারা। যেসব জমিতে গাছ গজানোর বিষয়টি ধীরগতিতে হচ্ছে, সেখানে ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। এসব কাজ করতেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে ভাড়া বাসা নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ছয়টি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপণ করা আলুর জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। কৃষকরা শ্রমিকদের নিয়ে গজিয়ে ওঠা আলুগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
জেলার টঙ্গিবাড়ীর পদ্মা নদীঘেঁষা হাসাইল গ্রামের কৃষি জমির পাশেই আলুর বস্তা (ছালা) শরীরের নিচে-ওপরে দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে এক শিশু। কনকনে শীতের শীতল হাওয়া থেকে নিরাপদ রাখতে শিশু সন্তানকে জমির পাশেই এক টুকরো খালি জায়গায় ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন নারী শ্রমিক মা রহিমা বেগম। পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে পদ্মার তীরের হাসাইল গ্রামের কৃষি জমিতে রোপণ করা আলুগাছ পরিচর্যার কাজ করছেন নারী শ্রমিকরাও। সেই নারী শ্রমিকদের একজন রহিমা বেগম। জমিতে পরিচর্যার কাজ করার সময় তাঁর ছেলে শিশু সন্তান ঘুমিয়ে পড়লে তাকে এভাবেই ঘুম পাড়িয়ে রেখে জীবিকার তাগিদে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কৃষি জমিতে কথা হয় গাইবন্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের সঙ্গে। নারী শ্রমিক কাজলী দাস বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের মতো তারা একই পরিশ্রম করছেন। পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি ৫৫০ টাকা হলেও তাদের মজুরি ৪৫০ টাকা। আবার স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। মজুরি বৈষম্যের এ তথ্য তুলে ধরে তাদের কষ্টের কথা বলেন কাজলী দাসসহ অপর নারী শ্রমিকরা।
টঙ্গিবাড়ীর ধামারণ গ্রামের কৃষক সাহাবুদ্দিন হাওলাদার জানান, এবারও ৬০০ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আলু উত্তোলন শুরু হবে। তাই গজিয়ে ওঠা গাছ দেখে আলুর ফলন ভালো হবে মনে করে আশায় বুক বেঁধেছেন।
সদর উপজেলার পূর্ব মাকহাটী গ্রামে কৃষি জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিক মুক্তার ও মাসুম মিয়া। তারা জানালেন, ভালো ফলনের আশায় কৃষকের আলুগাছ পরিচর্যায় জনপ্রতি ৫০০ টাকা মজুরিতে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।
সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের টরকী গ্রামের আলু চাষি মো. নূর বলেন, এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। এখন গাছ গজিয়ে ওঠায় তা পরিচর্যা করতে নারী শ্রমিকরা তাঁর জমিতে কাজ করছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলেই রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা আলু রোপণ কাজে যুক্ত হতে প্রতিদিন সকালে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জড়ো হচ্ছেন। কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর তারা আলু রোপণে জমিতে কাজ শুরু করে দিচ্ছেন।
রংপুর থেকে আসা শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী আবার কোথাও দিনব্যাপী মজুরি নিয়ে তারা কৃষকের জমির আলুগাছ পরিচর্যা করছেন। ন্যায্য মজুরি পাওয়ায় তারা খুশি মনে কনকনে শীতের মধ্যে আগাছা পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, এ মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫ টন। জেলায় ৭৮ হাজার কৃষক পরিবারের ৪ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।
- বিষয় :
- মুন্সীগঞ্জ
- আলু