দুদকের অভিযান
টেন্ডার ছাড়াই রাসিকের সংস্কার কাজ করছেন যুবদল নেতা!
রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে দুদকের অভিযান
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৭:২১ | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৮:৩১
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংস্কার কাজে অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতির ঘটনায় নগর ভবনের প্রকৌশল শাখায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দীক এবং উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান। অভিযান শেষে দুদক জানিয়েছে, কাজ ইতোমধ্যে অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ কাজের ঠিকাদার নির্বাচন সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেনি সিটি করপোরেশন। আবার যেসব কাগজ দিয়েছে তার একটি যাচাইয়ের জন্য ঠিকাদারের মোবাইল নম্বর হিসেবে উল্লেখ থাকা নম্বরটিতে ফোন করে দুদক দেখেছে, নম্বরটি কোনো ঠিকাদারের নয়। তিনি চাঁদপুরের এক ব্যক্তি।
৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরই সিটি করপোরেশনে তাণ্ডব চালানো হয়। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় নগর ভবনে। এতে ২১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সম্প্রতি এসবেরই সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠে।
জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া খান মিলু বেশিরভাগ কাজ করছেন। ইতোমধ্যে নগর ভবনের রঙ করার কাজ শেষ হয়েছে। লাগানো হয়েছে নতুন গ্লাস। এখন প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে মেয়রের দপ্তর সংস্কার করা হচ্ছে। তবে কাজের কোনো টেন্ডার হয়নি। ‘কোটেশন মেথোডে’ কাজ করার কথা বললেও কাগজপত্রই প্রস্তুত করতে পারেনি নগর ভবন।
বৃহস্পতিবার দুদক কর্মকর্তারা অভিযানে গেলে দীর্ঘ সময় তাদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে বসিয়ে রাখা হয়। পরে বিল দেওয়া হয়েছে এমন তিনটি কাজের কাগজপত্র দেওয়া হয় দুদক দলকে। আর চলমান সাতটি কাজের কোনো কাগজপত্রই সরবরাহ করতে পারেননি প্রধান প্রকৌশলী। কার্যাদেশ ছাড়াই ঠিকাদার কীভাবে কাজ করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান শেষে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, রাসিকের ক্ষয়ক্ষতির ২১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯ টাকার কাজ ছোট ছোট ভাগে করা হচ্ছিল। অভিযানে দুদক দল ফরিদা ইয়াসিমন, মাইসা এন্টারপ্রাইজ ওবং শাহরিন এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাগজ পেয়েছেন। মাইসা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ইয়াহিয়া খান মিলু। শাহরিন এন্টারপ্রাইজের কাগজপত্রে স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে এমএম মাহফুজুর রহমান নাম লেখা আছে। তবে মোবাইল নম্বরে ফোন করে দেখা গেছে, নম্বরটি তার নয়। চাঁদপুরের এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেছেন, তিনি ঠিকাদার নন। কোন দরপত্রেও অংশ নেননি। শাহরিন এন্টারপ্রাইজ ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪০ টাকার কাজ করেছে।
এই কাজের কাগজ জাল হিসেবে মনে করা হচ্ছে জানিয়ে দুদক কর্মকর্তা আমির হোসাইন বলেন, ‘যারা কাজ পেয়েছে একই ব্যক্তি মনে হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর আলাদা আলাদা নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাছাকাছি দর দাখিল করেছে। তারা কাজ পেয়েছে। পিপিআর অনুযায়ী প্রতিযোগিতা হতে হবে। এখানে সঠিক প্রতিযোগিতা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়নি।
তিনি বলেন, ‘কাগজ দেওয়ার জন্য আমাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু মাত্র তিনটা ফাইল তারা আমাদের দিয়েছেন। আর আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এখনও সাতটা কাজ চলমান। সিটি করপোরেশন তিনটি কাজের ফাইল দিতে পেরেছে। কিন্তু এই সাতটা কাজের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এরই মধ্যে কাজের অর্ধেক হয়েছে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমেই ঠিকাদাররা কাজ করেছেন। কোনো অনিয়ম হয়নি। দুদক তাদের মতো বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি।