দিনে আড়াইশ রোগী দেখেন দুই চিকিৎসক

ছবি-সংগৃহীত
আনোয়ার হোসেন স্বপন, লালমনিরহাট
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৭:২৮ | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৯:৪২
প্রায় তিন লাখ বাসিন্দার লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন মাত্র দু’জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)। ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াইশ রোগী দেখছেন তারা। এ দুই চিকিৎসক হলেন আব্দুস সালাম শেখ ও ওমর ফারুক।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এ দুই চিকিৎসকের মধ্যে একজন শিশুরোগী দেখছেন; অন্যজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষদের দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। ঠান্ডার কারণে বেড়েছে রোগীর চাপ, যা সামলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। মায়েরা এসেছেন শিশু-সন্তান নিয়ে। তাদের অনেকেই শিশু বিশেষজ্ঞের খোঁজ করছিলেন।
কথা হয় অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে আসা সিদ্দিকা হোসেন ও হালিমা বেগমের সঙ্গে। তারা জানান, হাসপাতালের শিশু কনসালট্যান্ট চিকিৎসক আজমল হকের চেম্বার বন্ধ। বাধ্য হয়ে তারা স্যাকমো চিকিৎসককে দেখাচ্ছেন। তারা জানান, শীত বেড়ে যাওয়ায় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ওমর ফারুক জানান, রোগীর চাপ প্রায় প্রতিদিনই থাকে। গত দুদিনে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে শিশুরা
চিকিৎসা নিচ্ছে।
খোঁজ দিয়ে জানা যায়, চিকিৎসক আজমল হক সরকারি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পালন করছেন। গাইনি বিভাগের চিকিৎসক এলিনা এক মাসের অর্জিত ছুটি ভোগ করছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা নাজমুল হাসান জানান, স্যাকমো চিকিৎসক দিয়ে চলছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মেডিকেল চিকিৎসকদের দেখা মিলছে না। গাইনি রোগীরা বিপাকে পড়েছেন।
বক্তব্য ও তথ্য জানতে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের খোঁজ নিতে গেলে তাঁর চেম্বার তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। জানা যায়, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সানাউল হাসানও ছুটিতে আছেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের বাইরে তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ হাসপাতালে চারজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে তিনজন জরুরি বিভাগে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই বহির্বিভাগে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। তিনি জানান, দু-এক মাসের মধ্যে তিনজন চিকিৎসক বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাবেন। তখন একজন ডাক্তার দিয়ে এ হাসপাতাল চালু রাখতে হবে।
আদিতমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। কার্ডিওলজির একজন টেকনিশিয়ানকে দিয়ে আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আদিতমারী মহিষখোঁচা কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আতাউর রহমান জানান, চিকিৎসক সংকটে হাসপাতালটি খুঁড়িয়ে চলছে। তিস্তা তীরবর্তী চরের অসহায় মানুষগুলো স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দালালরা প্রতারিত করে শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আজমল হক জানান, কয়েক মাস আগেও এ হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসক ছিলেন। অধিকাংশই বদলি ও বিভিন্ন কোর্স করার জন্য অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে মাত্র চারজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। এদের মধ্যে তিনজন দু-এক মাসের মধ্যে অন্যত্র চলে যাবেন।
- বিষয় :
- চিকিৎসক
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- ছুটি