ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

খরচ কম সরিষায়, লাভ বেশি

খরচ কম সরিষায়, লাভ বেশি

পদ্মার চরে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ধামারণ এলাকায় সমকাল

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:২১

চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন গফুর চান। সরিষার দেশি জাতের চেয়ে উন্নত জাতে ফলন বেশি হয় বলে মনে করেন মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজারের এই চাষি। গত বছরের তুলনায় এবার তাঁর জমিতে ফলনও হয়েছে বেশি। এবার বাজারেও দাম ভালো মিলবে বলে মনে করেন তিনি। 
আলু উৎপাদনের জন্য ঢাকার কাছের এ জেলার খ্যাতি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সীগঞ্জে সরিষা চাষ বেড়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, ভোজ্যতেলের বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে সরিষা তেলের কদর বাড়ছে। ফলে তেলের চাহিদা তুঙ্গে। একই সঙ্গে কম খরচে তারা মুনাফাও পাচ্ছেন বেশি। সব মিলিয়ে জেলার কৃষকের মধ্যে সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েই চলছে। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ছয় উপজেলায় ৪ হাজার ৩৭৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অথচ আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৭৯৩ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে, বিপরীতে চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৯৭৭ হেক্টর জমিতে। এর আগের মৌসুমেই জেলায় ৩ হাজার ৪৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন চাষিরা। 
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৪ হাজার ৬০০ জন কৃষককে চলতি মৌসুমে ১ কেজি সরিষা বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কৃষককে সহায়তা দেওয়া হয়েছে এক কেজি সরিষা বীজ। মোট ২৪৩ জন কৃষককে সরিষা প্রদর্শনী ও উপকরণ সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। 
জেলার বিভিন্ন গ্রামে সরিষার আবাদ হয়েছে। হলুদে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। সম্প্রতি দেখা যায়, পৌষের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুল। শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশায় মোড়ানো এসব জমিতে যেন অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছানো। কোথাও মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছি, কোথাও সহস্র পাখির কলকাকলি শোনা যায়। সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আসছেন মানুষ। 
সদর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের পাভেল ইসলাম বলেন, তারা সরিষা চাষ করেন কম খরচে লাভ বেশি হয় বলে। গত বছর ৫ হাজার টাকা খরচ করে চাষ করেন। লাভ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এবারও সরিষার বীজ ও তেলের দাম বাজারে ভালো মিলছে। সরকারের পক্ষ থেকেও সরিষা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। একই উপজেলার পাঁচগড়িয়াকান্দির শফিক মিয়া আগে আলুর চাষ করতেন। কিন্তু বছর বছর লোকসান গুনতে হয়েছে তাঁকে। শফিক বলেন, এখন সরিষার তেলের দাম বেড়েছে। যে কারণে সরিষা চাষ করে মুনাফা হয় বেশি। এই চাষে ১০ হাজার টাকা খরচ করলে বিক্রি করা যায় ২০-২৫ হাজার টাকায়। 
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ধামারণ গ্রামের সোলাইমান মিয়া এবার আলু চাষ কমিয়ে সরিষা চাষ বেশি করেছেন। এবার এক কানি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, সরিষার জমিতে বেশি চাষ দিতে হয় না; ওষুধও বেশি লাগে না। খরচ কম, তাই সবাই এদিকে ঝুঁকছেন। একই রকম মন্তব্য করেন ওই গ্রামের জয়নাল হোসেন নামের আরেক কৃষক। তাঁর ৪ গন্ডা জমিতে সারিষা চাষে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হলে ১২-১৪ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, কয়েক বছর ধরে সরিষার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। তাই এবার আবাদ বেড়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এখনও পর্যন্ত রোগবালাইয়ের তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে সম্পূরক রবিশস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। বিনামূল্যে সরিষা বীজ দিয়েছেন। এরই মধ্যে সরিষার বেশির ভাগেই ফুল এসেছে। এবার তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৩ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে। 

আরও পড়ুন

×