খুলনায় দুর্যোগ ঠেকাতে পারছে না মাটির বাঁধ
.
মামুন রেজা, খুলনা
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:০০
উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ২ হাজার ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বেশির ভাগই মাটি দিয়ে তৈরি। কংক্রিটের ব্লক দিয়ে তৈরি বাঁধ মাত্র ৪৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ারের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে পারছে না মাটি দিয়ে তৈরি এসব দুর্বল বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরিতে ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় মাটি দিয়েই বাঁধ সংস্কার ও তৈরি করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে বেড়িবাঁধ রয়েছে ২ হাজার ২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ষাটের দশকে ১ হাজার ৯৮২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে জরাজীর্ণ ৬০ কিলোমিটার। ফলে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ ঠেকাতে পারছে না মাটির বেড়িবাঁধ। যেসব স্থানে ব্লকের বেড়িবাঁধ রয়েছে, সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি হয় কম। তিন জেলায় ব্লক দিয়ে তৈরি বেড়িবাঁধ মাত্র ৪৫ কিলোমিটার।
স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা হারিয়েছে ষাটের দশকে তৈরি বেড়িবাঁধ। ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া মাটির বেড়িবাঁধের অর্ধেকও এখন অবশিষ্ট নেই। ফলে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। এ ছাড়া নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারে বাঁধ উপচে পানি ঢোকে লোকালয়ে।
কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল শেখ বলেন, অনেক জায়গায় বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কমে গেছে। কিছু জায়গায় ভেঙে একেবারে সরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া কিছু কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে নদী থেকে চিংড়ি ঘেরে লবণপানি তোলা হয়। এর ফলে ওই জায়গাগুলোতে বাঁধ আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
দশহালিয়া গ্রামের কামরুল ইসলাম ও কামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে সেখানে মাটি দিয়ে এবং কিছু কিছু জায়গায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামত করা হয়। কিন্তু তা টেকসই হয় না। আবার অনেক সময় লোকজন জিও ব্যাগ বাড়ি নিয়ে চলে যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের তীরে ব্লক দিয়ে আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর গত এক যুগে বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কোনো ক্ষতি হয়নি বাঁধটির।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কমেছে। বাঁধের পাশে নদীতীরে গাছপালা নেই, বাঁধের মাটি-নদীর পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত। এই মাটির ‘বন্ডিং ক্যাপাসিটি’ কম। এ ছাড়া বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পার্শ্ববর্তী চিংড়ি ঘেরে লবণপানি তোলা হয়। ফলে বাঁধ হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, কংক্রিটের ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার ও তৈরি অনেক ব্যয়বহুল। ব্লক দিয়ে প্রতি কিলোমিটার বেড়িবাঁধ তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। আর মাটি দিয়ে করা হলে চার/পাঁচ কোটি টাকা লাগে। ব্লক দিয়ে তৈরি করতে যে টাকা প্রয়োজন, তা সংস্থান করা কঠিন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, পুরো বেড়িবাঁধের মধ্যে ৬০০/৭০০ কিলোমিটার ব্লক দিয়ে করা দরকার। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হয় না। বর্তমানে ব্লক দিয়ে ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণকাজ চলছে। জরাজীর্ণ ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মাটি দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। এসব বাঁধের কিছু স্থানে সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পর বালুভর্তি জিও ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। নিজস্ব অর্থায়নে ৩১ নম্বর পোল্ডারে বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে। তখন কিছু স্থানে ব্লক দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- মাটি