বন্ধুর বাড়ির মাটি খুঁড়ে মিলল যুবকের লাশ
নিহতের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: সমকাল
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯:৫৫
বন্ধুর বাড়ির মাটি খুঁড়ে নিখোঁজ এক রিকশাচালকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার মডেল টাউন এলাকা থেকে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করেছে।
নিহতের নাম হালিম শেখ (২৫)। তিনি শহরের মধ্য আলিপুর মহল্লার বাসিন্দা মৃত আব্দুর রব শেখের ছেলে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে হালিম মেজ। তাঁর লাশ পাওয়া গেছে মোকলেছুর রহমানের বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে। এই বাড়িতে হালিম শেখের বন্ধু রনী মোল্লা (২৬) এবং তাঁর স্ত্রী সুমী (২৩) ভাড়ায় বসবাস করেন।
রনি নরসিংদীর রায়পুরার আব্দুল মতিনের ছেলে। সুমির বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়ায়।
নিহতের বোন সাথী আক্তার জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে তাঁর ভাই বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হন। এর পর আর বাড়িতে ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে না পেয়ে ৩ জানুয়ারি তিনি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
বাড়ির মালিক ফরিদপুর সদর উপজেলার চর বালুধুমের বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান জানান, রনি এবং তাঁর স্ত্রী দেড় মাস ধরে এই বাড়িতে ভাড়া থাকছেন। স্বামী-স্ত্রী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ওয়ার্ড বয়ের কাজ করে বলে জানিয়েছিল।
পুলিশ জানায়, হালিমের রিকশা রনির ভাড়াবাড়ির উঠানের টিনের ঘর থেকে ভাঙাচোড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে ঘরের পূর্ব দিকে সীমানাবেড়ার কাছে বালু খুঁড়ে প্লাস্টিকের বস্তা পাওয়া যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বস্তা খুলে লাশ পাওয়া যায়। মৃতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গলা কাটা ছিল। দুই পা ভাঁজ করে বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে তাঁকে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
রিকশার মালিক নূর ইসলাম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হালিম ফোনে জানায়, সে রাতে গ্যারেজে যাবে না। এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গেছে, পরদিন ফিরবে। একপর্যায়ে আমরা জানতে পারি, হালিমের বন্ধু রনি মোল্লা তাকে ভাড়া করে নিয়ে যায়। পরে রনির বাড়িতে এসেই তার লাশ পেলাম।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে রহস্য আছে। রনি পালিয়ে গেলেও সুমী বেগম বাড়িতে ছিলেন। সে কাজে সহযোগিতা করেনি, বরং বাধা দিয়েছে। সেসহ দুজনকে আটক করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে এসেছি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর তারা মধ্য আলীপুরে একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলেন। ওয়াজ শুনে দু’জন চুনাঘাটার বাসায় আসেন। এর পর থেকে হালিম নিখোঁজ। স্বজনদের সন্দেহের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। শিগগিরই রনিকে গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, এক দিন আগে একই এলাকা থেকে রিকশাচালক হুসাইনের (১৩) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া আমিনুর রহমান নামে আরও এক রিকশাচালক গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।