ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

আইনি জটিলতায় চালু হচ্ছে না হাসপাতাল

আইনি জটিলতায় চালু হচ্ছে না হাসপাতাল

ফাইল ছবি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:১৭

কয়েক মাস আগে শেষ হয়েছে নির্মাণকাজ। প্রায় চার মাস আগে উদ্বোধনের কথাও ছিল। কিন্তু একটি পক্ষের আইনি বাধায় চালু করা যায়নি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। 
নতুন হাসপাতাল চালু না হওয়ায় প্রায়ই উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে ছুটছেন সেবাপ্রার্থীরা। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি বেড়েছে ব্যয়। 
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখীপাড়া এলাকায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয়। চারতলা হাসপাতালটির মূল ভবনের পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসক, নার্সদের নতুন কোয়ার্টারসহ আরও পাঁচটি ভবন। নতুন হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধাসহ মুমূর্ষ রোগীদের জন্য রয়েছে পাঁচটি আইসিইউ। হাসপাতালটি তৈরি শেষে উদ্বোধনের তারিখ ছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর। তবে মুলফৎগঞ্জ এলাকা থেকে পুরোনো হাসপাতালের কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার বিপক্ষে আপত্তি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় স্থানীয় একটি পক্ষ। এতে আটকে যায় নতুন ভবন উদ্বোধনের কার্যক্রম। 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনের অবস্থান নড়িয়া মূল উপজেলা থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা কেদারপুর ইউনিয়নের মুলফৎগঞ্জ এলাকায়। ২০১৮ সালে নদী ভাঙনে হাসপাতালটির তিনতলা মূল ভবন বিলীন হয়ে যায়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সচল রাখতে পাশের সরকারি কোয়ার্টারগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের মূল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে একটি পরিত্যক্ত ভবনে। স্থান স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা অর্ধেকে নেমে আসে। ৫০ জন রোগীর শয্যার বিপরীতে মাত্র ২৫টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া এক্স-রে যন্ত্র থাকার পরও কক্ষের অভাবে সেটি বসানো সম্ভব হয়নি। প্যাথলজি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার সরকারি কোয়ার্টারে স্বল্প পরিসরে চালু রয়েছে। পুরোনো হাসপাতালে ভবন আর জায়গা সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের কর্মচারীরা।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী আশ্রাফুন নাহার আশা বলেন, হাসপাতালের মূল ভবনটি নদীতে বিলীন হওয়ার পরে চিকিৎসক কোয়ার্টারে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। তবে স্থান সংকটে ফাইল কেবিনেট, কম্পিউটার সঠিকভাবে বসানো সম্ভব হচ্ছে না। হিসাব শাখার মূল নথিগুলো এলোমেলোভাবে রাখতে হচ্ছে। নতুন হাসপাতাল ভবনে গেলে এসব সমস্যা থাকবে না।
হাসপাতালের আরেক কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালের সেবার মান খারাপ হচ্ছে। এজন্য কিন্তু চিকিৎসক কিংবা নার্সরা দায়ী নয়। এর প্রধান কারণ স্থান স্বল্পতা। শিগগির নতুন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চালু হলে নড়িয়াবাসীকে আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। ভোগান্তি লাঘবে আইনি জটিলতা কাটিয়ে শিগগিরই হাসপাতালটি চালুর দাবি তাদের। 
স্থানীয় বাসিন্দা শাহালম মাদবর বলেন, নতুন হাসপাতাল নির্মাণ হলেও তাদের আশা পূরণ হয়নি। হাসপাতালটি দ্রুত চালু করা হলে সাধারণ মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ইমন মাদবর বলেন, নতুন হাসপাতালে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু এটি চালু না হওয়ায় তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এতে তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে এবং খরচ বেড়েছে। নতুন হাসপাতালটি শিগগির চালুর দাবি জানান তিনি।
আব্বাস আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রায় চার মাস আগে হাসপাতালটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও মামলা জটিলতায় চালু হয়নি। এজন্য তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তারা চান মামলা জটিলতা শেষ করে শিগগির হাসপাতালটি চালু করা হোক। তাহলে তারা সুচিকিৎসা পাবেন।
এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুল জমাদ্দার বলেন, পুরোনো ভবনে জায়গা ও চিকিৎসার সরঞ্জাম সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। নতুন ভবনে চিকিৎসার সব আধুনিক সুবিধা ও মুমূর্ষ রোগীদের জন্য পাঁচটি আইসিইউ রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, পুরোনো হাসপাতাল এলাকার স্থানীয় একটি পক্ষ নতুন হাসপাতালে যাওয়ার বিপক্ষে। হাসপাতালের কার্যক্রম যাতে সরানো না হয়, সেজন্য তারা হাইকোর্টে একটি রিট করেছে। সব জটিলতা কাটিয়ে পুরোনো ভবনে ছেড়ে উপজেলার মূলকেন্দ্রে নতুন ভবনে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু হলে চিকিৎসকরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন এবং উপজেলাবাসী সুফল ভোগ করবে।
 

আরও পড়ুন

×