ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

শতবর্ষী বিদ্যাপীঠে প্রাণের উল্লাস

শতবর্ষী বিদ্যাপীঠে প্রাণের উল্লাস

কুলাউড়ার এনসি স্কুলের ১১৬ বছর পূর্তি উদযাপনে শিক্ষার্থীদের শোভাযাত্রা সমকাল

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) ও কুলাউড়া     (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:২১

ঐতিহ্যবাহী দুই শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ঘিরে প্রাণের উল্লাস জেগেছে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে। এর মধ্যে ১১৬ বছরপূর্তি উদযাপনের আয়োজনে ব্যস্ত মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। অপরদিকে শতবর্ষে পদার্পণের লগ্ন স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণিল আয়োজনে মেতেছিল কুলাউড়ার নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
ধান-ঘিয়ের দেশে ‘জ্ঞানের দেবী’ বিশ্বেশ্বরী
দেশীয় ধান আর ঐতিহ্যবাহী ঘি বিক্রির জন্য গড়ে উঠেছিল সুনামগঞ্জের মধ্যনগর বাজার। এক সময় ঘিয়ের বাজার বিলুপ্ত হলেও ধানের বাজার সুনাম কুড়িয়ে যাচ্ছে এখনও। জেলার সবচেয়ে অবহেলিত এ প্রান্তিক জনপদে শিক্ষা বিস্তারে বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। শতবর্ষী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন হাওরাঞ্চলের বাতিঘর হিসেবে পরিচিত সর্বমহলে। আগামী ১০ জানুয়ারি হাওরের পাঠশালা এই বিশ্বেশ্বরীর শত বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।
সবকিছু ঠিক থাকলে, এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অনুষ্ঠান সামনে রেখে আবেগাপ্লুত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। চলছে প্রস্তুতির কর্মব্যস্ততা।
২০১৯ সালেই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতবর্ষপূর্তি উৎসব ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। হাওরাঞ্চলে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন যেন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কভিড-১৯ পরিস্থিতিসহ নানাবিধ কারণে দুইবার অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন হয়। এমনটাই জানান শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের আহ্বায়ক বসন্ত কুমার বিশ্বাস।
শনিবার দুপুরে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কথা হয় বসন্ত কুমারের সঙ্গে। তিনি জানান, তিনিও এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই করেছেন শিক্ষকতা। শিক্ষা ও চাকরি জীবনসহ দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে বিশ্বেশ্বরীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন মায়ার বাঁধনে। তাঁর বাবাও ছিলেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক গোলাম জিলানী জানান, মধ্যনগর গ্রামের বাসিন্দার কাছে এই প্রতিষ্ঠান জ্ঞানের বেদি। তাঁর বাবা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনিও এখানে পড়ালেখা করেছেন। এখন তাঁর সন্তানরা পড়ছেন। তিন পুরুষ ধরে এই প্রতিষ্ঠান তাদের পরিবারে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে।
ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসনামলে তৎকালীন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের পঞ্চম জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী ও মধ্যনগরের শিক্ষানুরাগীরা এই জনপদে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর মা বিশ্বেশ্বরী রায়চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বেশ্বরী মাইনর স্কুল। এ সময় প্রতিষ্ঠানের স্থান ও খেলার মাঠসহ ৪ দশমিক ১৯ একর জমি ও নগদ অর্থ দেন তিনি। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত রাকেশ চন্দ্র তালুকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যাত্রা শুরু করে হাওরপারের জ্ঞানের তরী। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং ১৯৯৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা চালু হয়।
অনির্বাণ বাতিঘর এনসি স্কুলের ১১৬
বর্ণাঢ্য আয়োজনে মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কুলাউড়া উপজেলার নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের (এনসি স্কুল) ১১৬ বছরপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে মুখর ছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। আনন্দ শোভাযাত্রা ও বেলুন উড়িয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। 
প্রধান অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী এবং প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আমান উল্লাহ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউএনও মহি উদ্দিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

×