১০ বছর পর আলোচনায় সেই পানামা ফারুক
ফাইল ছবি
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:৩৩
বরিশাল নগরে মুদি-মনিহারির পাইকারি ব্যবসায়ী এলাকা বাজার রোড। রাজধানীতে দুই জগতের দু’জন তারকার বিয়ে নিয়ে শনিবার দুপুর থেকে এই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে নানামুখী আলোচনা। আলোচিত ওই বিয়ের কনে এ এলাকারই মেয়ে। কনেকে সবাই না চিনলেও তাঁর প্রয়াত পিতা নগরে একনামে পরিচিত। তিনি হলেন ফারুক আহমেদ। পানামা ফারুক নামে সর্বাধিক পরিচিত।
১৯৯৬ সালের নির্বাচন-পরবর্তী আওয়ামী লীগ শাসনামলে যুবলীগ নেতা পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য নগরে আলোচিত নাম ছিল পানামা ফারুক। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাসার অদূরে হাটখোলা সেতুতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি।
তাঁর একমাত্র মেয়ে জনপ্রিয় মেকআপ আর্টিস্টের সঙ্গে জনপ্রিয় একজন কণ্ঠশিল্পীর শুক্রবার রাজধানীতে বিয়ে হয়েছে। গণমাধ্যমসহ এ খবর শনিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে যায়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বাজার রোডের বাসিন্দাসহ নগরে অনেকের মধ্যে উৎসাহ জাগে। কনে বরিশালে থাকাকালে মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন। যে কারণে তিনিও নগরে অনেকের কাছে পরিচিত।
বাজার রোড খাজা মঈনউদ্দিন মাদ্রাসায় প্রবেশের প্রধান ফটকের দক্ষিণ পাশে ‘ইসমাইল ভবন’ নামক চারতলা বাড়িটি প্রয়াত পানামা ফারুকের। ভবন মালিক ৯০-ঊর্ধ্ব ইসমাইল হোসেন তাঁর পিতা। শনিবার দুপুরে ওই বাসায় গেলে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারুকের বিধবা স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে প্রায় ছয় বছর আগে আমেরিকাপ্রবাসী হয়েছেন। ফারুকের দুই ভাই মনা ও টিটু তাদের পিতাকে নিয়ে ভবনটিতে থাকেন।
দোতলার বাসিন্দা এক নারী ফারুকের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী পরিচয়ে জানান, বাসার পুরুষ সবাই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গেছেন। বিকেলে ফিরবেন। আলোচিত ওই বিয়ে নিয়ে জানতে চাইলে বললেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’ তিনি স্বামী ও দেবরের ফোন নম্বর দিতেও অস্বীকার করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারুকের পরিবারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক নেই।
ফারুকের ভাই মনা আহমেদ মোবাইল ফোনে বলেন, তাঁর ভাতিজি এইচএসসি পাসের পর বরিশালের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। তার মামারা আমেরিকাপ্রবাসী। সেই সূত্রে ২০১৮ সালে ভাবি ও ভাতিজা-ভাতিজি আমেরিকায় গিয়ে স্থায়ী হন। গত ডিসেম্বরের শুরুতে তাঁর ভাতিজি বরিশালে এসেছিল বলে জানান মনা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. পান্না জানান, ফারুক আহমেদ যখন ক্রসফায়ারে নিহত হন, তখন দুটি সন্তানই নাবালক ছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসনামলে বরিশাল নগর ছিল সন্ত্রাসের ভয়ংকর জনপদ। তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর অনুসারী অর্ধডজন সন্ত্রাসী গ্রুপ নগরের একেক এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। ফারুকের নিয়ন্ত্রণে ছিল বাজার রোড ও আমানতগঞ্জ এলাকা। তখন বরিশাল প্রেস ক্লাব ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁনের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুরের নেতৃত্ব দিয়ে পানামা ফারুক আলোচিত হন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি আত্মগোপনে যান। ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েক বছর পর তিনি ফের নগরে ফিরেছিলেন।
ভাই মনা আক্ষেপ করে বলেন, বড় ভাই ফারুককে রাজনৈতিক কারণে শত্রুতাবশত ২০১৪ সালে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। ভাতিজির বিয়ের পর সেসব ঘটনা নিয়ে মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাজে মন্তব্য করেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তা ছাড়া আমার ভাতিজি তো এসবের মধ্যে ছিল না। তাকে নিয়েও বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে।
- বিষয় :
- নিহত