ঢাকা শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চিকিৎসক নেই, ফিরে যাচ্ছেন রোগী

চিকিৎসক নেই, ফিরে যাচ্ছেন রোগী

ফাইল ছবি

সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:০৮

নজরুল ইসলাম উচ্চ রক্তচাপের রোগী। বসেছিলেন বহির্বিভাগের এনসিডি কর্নারে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এসে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাড়ি চলে যান। চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। আজও এসেছেন। ৯টায় চিকিৎসক আসার কথা। তাদের রুম তালাবদ্ধ। একই অভিযোগ সানোয়ারা বেগম, মর্জিনা খাতুনসহ অনেক রোগীর। 
তিন বছর আগে ৩১ শয্যার চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যায় রূপান্তর করা হয়। ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের তিনতলা ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২২ মে। নতুন ভবন নির্মাণ করতে ৩১ শয্যার পুরোনো দ্বিতল ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। ২০২৩ সালে কাজ শেষ করার কথা।  আড়াই বছরেও কাজ বুঝে পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় এক্স-রে, ইসিজি ও আলট্রাসাউন্ড মেশিনসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নষ্ট হবার উপক্রম। দিনের পর দিন ভোগান্তিতে পার করছেন রোগী ও চিকিৎসকরা।
ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চারঘাট উপজেলার তিন লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। ভবন সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে হাসপাতালের সেবার কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। এখানে ৩১টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৭ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাঁচজনের স্থলে আছেন একজন। আয়ার দুটি পদও শূন্য। এক বছর ধরে মেডিসিন, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক্স, সার্জারি, ইএনটি, অফথালমোলজি ও সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক নেই।
রোববার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো তিনতলা ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ছোট ছোট রুমে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন। প্রতিদিন ৩৫০-৪৫০ জন রোগী গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে চিকিৎসক সংকটে অধিকাংশ রোগী হাসপাতাল ঘুরে ক্লিনিকে যাচ্ছেন চিকিৎসা নিতে। ছোট্ট একটি রুমে প্যাথলজির পরীক্ষার কাজ চলছে। এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন স্থাপনের জায়গা না থাকায় টেকনোলজিস্টরা পরীক্ষার কাজ বাদ দিয়ে টিকিট বিক্রি করছেন। একই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গাদাগাদি করে ভর্তি রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। 
ভায়ালক্ষ্মীপুর এলাকার আলতাফ হোসেন বলেন, পেটে অসহ্য ব্যথা। হাসপাতালে এসে দেখি শিশু বিশেষজ্ঞ ছাড়া আর কোনো চিকিৎসক নেই। অপেক্ষা করে ফেরত যাচ্ছি। রাজশাহী শহরে ক্লিনিকে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেখানেও হাজার টাকা ভিজিট দিতে হয়। ভ্যান চালিয়ে রোগের চিকিৎসা করা অসম্ভব। 
 রাওথা এলাকার রুনা বেগমের ছেলে গাছ থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানলেন অর্থোপেডিক চিকিৎসক নেই। উপসহকারী দেখে এক্স-রে পরীক্ষা দিয়েছেন। হাসপাতালে সে ব্যবস্থাও নেই। বাধ্য হয়ে তাকে বাইরে ক্লিনিকে পরীক্ষা বেশি টাকা দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। চিকিৎসক নেই, পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, এমন হাসপাতাল বন্ধ রাখা উচিত। 
হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট আবু তাহের বলেন, দুই বছর ধরে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ। মেশিন থাকলেও ভবন না থাকায় সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। 
নবনির্মিত ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট প্রকৌশলী পিযুষ মণ্ডল বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতায় কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উপজেলার সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, নানা সংকট ও অবহেলায় দেশসেরা হাসপাতালটির সেবা আজ বন্ধের পথে। বারবার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক রেজা বলেন, চিকিৎসক ও ভবন সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা। নতুন ভবন বুঝে পেলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় সেখানে কাজ শুরু হতে দেরি হবে। এসবের চাহিদাপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×