সওজের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ

হবিগঞ্জ শহরের বাইপাস সড়কে সওজের খাল ভরাট করে প্রাইভেট ক্লিনিক নির্মাণ সমকাল
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:৪০
হবিগঞ্জ শহরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। এরই মধ্যে সওজের জমি দখলে ভরাট করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। শহরের বাইপাস সড়কের কালীগাছতলা, আনোয়ারপুর পয়েন্ট ও আধুনিক স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন এলাকায় খাল ভরাট ও জায়গা দখল করে এসব দোকানপাট, মার্কেট ও আধুনিক ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এক থেকে দুইশ ফুট খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরি করছেন প্রভাবশালীরা। এতে এলাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, কালীগাছতলায় প্রায় ১০০ ফুট প্রশস্ত একটি সরকারি খালের একাংশ ভরাট করছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সুনীল বণিক ও তাঁর লোকজন। এ ছাড়া বাইপাস সড়কের আধুনিক স্টেডিয়াম এলাকায় প্রায় ২০০ ফুট খাল ভরাট করে কুইন মেরী নামে একটি আধুনিক ক্লিনিক নির্মাণ করছেন সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা নুরউদ্দিন। এসব জায়গা ভরাট ও দখল বন্ধে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তারা এর তোয়াক্কা করছেন না। নিজেদের ইচ্ছেমতো খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের মাটি সরানোর কথা বললেও তারা মানতে নারাজ। এর আগে কালীগাছতলায় খাল ভরাটকারী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সওজের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত সুনীল বণিক ও তাঁর লোকজন মাটি না সরিয়ে খালটি ভরাট করে রেখেছেন এবং সেখানে থাকা তাঁর নিজস্ব জায়গাতেও মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করছেন। নিজের জমিতে নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে যাতায়াতের জন্য রাতে খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছেন।
অন্যদিকে আধুনিক স্টেডিয়াম এলাকায় কুইন মেরী নামে একটি ক্লিনিক নির্মাণ করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সাবেক জেলা প্রশাসক ওই ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী নুরউদ্দিনকে মাটি সরানোর নির্দেশ দেন। এতে তিনি
কিছুদিন মাটি সরিয়ে কাজ বন্ধ রাখেন। সম্প্রতি তিনি পুনরায় খালটি ভরাট করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। এতে করে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
শুধু তাই নয়, আনোয়ারপুর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সওজের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা ব্যবসা। মাঝেমধ্যে সওজ বিভাগ অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও কয়েক দিন পর আবার সেসব জায়গা দখলে নেওয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি জায়গা দখল বা খাল ভরাটের কোনো অনুমতি নেই। বর্ষায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অলিগলিতে জমে থাকে হাঁটু পানি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শহরের পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বাইপাস সড়কের খালটি অন্যতম মাধ্যম। সম্প্রতি খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কালীগাছতলা ও আধুনিক স্টেডিয়ামে খালটি ভরাট হলে ওই এলাকায় বড় ধরনের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এলাকাবাসী জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে খাল ভরাটের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
কালীগাছতলা এলাকার বাসিন্দা অজয় দাস জানান, খালটি শহরের বাইপাস সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত। সুনিল বণিকের লোকজন খালটি ভরাট করছেন। খালে যে পরিমাণ মাটি ফেলা হয়েছে, তা উত্তোলন করে খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনিসহ সেখানকার বাসিন্দারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা জানান, সম্প্রতি সুনিল বণিক ও তাঁর লোকজন খাল ভরাট করলে প্রশাসনকে অবহিত করেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের লোকজন তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি ভরাটের আলামত পেলেও অভিযুক্তরা পালিয়ে যান।
হবিগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার শাহ সালাউদ্দিন জানান, তাঁর জানামতে খালের একটি অংশ ভরাট করেন সুনীল বণিক নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর আত্মীয়স্বজনরা। বিষয়টি স্থানীয়রা প্রশাসনকে অবগত করেছেন। বর্তমানে সেটি কোন অবস্থায় আছে তা তাঁর জানা নেই। তবে খালটি ভরাট হলে কালীগাছতলা ও এর আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে।
সুনীল বণিক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁর আত্মীয় দেবব্রত চৌধুরী জানান, তারা খাল ভরাট করেননি। খালের পাশের নিজস্ব জমিতে মাটি ফেলছেন। অপর অভিযুক্ত নুরউদ্দিন জানান, জনস্বার্থে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি সেটি ভরাট করে পাশে ক্লিনিক নির্মাণ করছেন।
হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিছু ভাসমান স্থাপনা রয়েছে যেগুলো অভিযানের পর পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। কেউ যদি খাল ভরাট করে থাকে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- নির্মাণকাজ