ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

মিষ্টি আলু যাচ্ছে জাপানে

মিষ্টি আলু যাচ্ছে জাপানে

শেরপুরের চরাঞ্চলে চাষ করা মিষ্টি আলু বিদেশে পাঠানোর জন্য বাছাই করা হচ্ছে সমকাল

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:২০

শেরপুরের চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি আলুর চাষ করছেন কৃষক। এই আলু রপ্তানি হচ্ছে জাপানে। এতে অধিক লাভের মুখ দেখছেন কৃষক। কৃষির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বহু বছর আগে থেকেই শেরপুরে মিষ্টি আলু চাষ হয়ে আসছে। তবে তার পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য। জেলার বাইরে সেভাবে বিক্রি হতো না। নিজেরা কিছু খেতেন এবং সামান্য কিছু বিক্রি করে দিতেন। জাপানি একটি কোম্পানির উৎসাহে চলতি বছর বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি আলু চাষ করছেন জেলার চরাঞ্চলের কৃষক।
জাপানের নারুদা নামে কোম্পানি শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়েরচর, চরমোচারিয়া ও কামারেরচরে মিষ্টি আলু চাষের জন্য ৪৩ কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে। শর্ত মতে ৯০ একর জমিতে কোকই জাতের মিষ্টি আলু চাষ করেছেন তারা। আলু চাষের উপকরণ বীজ, সার, কীটনাশক সব বিনামূল্যে দিয়েছে কোম্পানিটি। প্রকল্পের সব আলু তারা ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করবে বলেও চুক্তি হয়।
এ বছর জেলায় ২০৫ হেক্টর জমিতে আলু 
চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কৃষি বিভাগ জানায়, চাষ হয়েছে ২১৩ হেক্টরে। জাপানে রপ্তানির কথা শুনে এবং লাভজনক ফসল হওয়ায় আলু চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের।
কৃষিবিদরা জানান, মিষ্টি আলু ভীষণ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি লতানো উদ্ভিদ। এতে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও ফাইবার রয়েছে। হাত-পায়ের আঙুল ফোলা 
কমানো, প্রসবের সমস্যা দূর করতে এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য এর পাতা ও মূল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না এ আলু। গড় তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ আলুর জন্য কার্যকরী। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি মিষ্টি আলু চাষের উপযোগী। তাই সবজির পাশাপাশি মিষ্টি আলু চাষে জোর দিলে কৃষি অর্থনীতিতে নবদিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
নরুদা কোম্পানিতে কর্মরত শেরপুর কৃষি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. জাকারিয়ার ভাষ্য, তাদের কোকই জাতের আলু ভীষণ সুস্বাদু। কোম্পানি সেদ্ধ আলু, চিপস, মিষ্টি এসব তৈরি করে বিক্রি করবে। পাশাপাশি জাপানে পাঠাবে আলু।
কথা হয় জঙ্গলদি নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম ও মো. রফিকের সঙ্গে। তারা জানান, কোম্পানি তাদের সার, বীজ, কীটনাশক সবকিছু দিয়েছে। উৎপাদিত আলু ৬৫০ টাকা মণ দরে কিনে নেবে। এক বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ আলু সাধারণত ফলন হয়। তাদের সম্ভাব্য 
খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা। মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহে আলু সংগ্রহ করবেন তারা। বিঘাপ্রতি আলুর বিক্রয় মূল্য হবে ৪৫ হাজার টাকার মতো। এতে তাদের ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, সবজিতে উদ্বৃত্ত জেলা শেরপুর। সবজির পাশাপাশি জাপানের একটি কোম্পানি মিষ্টি আলুর উদ্যোক্তা হওয়া এবং তারা এ আলু চাষ করায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। আলু প্রক্রিয়াজাত করে অনেক খাদ্যপণ্য তৈরি করা হচ্ছে। বড় বড় বিভাগীয় শহরে চিপস, মিষ্টি রেডিফুড তৈরি করে বিক্রি করছে। তিনি বলেন, উৎপাদিত আলু ভীষণ স্বাদের। অন্যান্য মিষ্টি আলু ওপরের অংশ (ছাল) সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু মিষ্টি আলু চামড়াসহ খাওয়া যাবে। জাপানিরা এ আলু সেদ্ধ করে কেকের মতো প্যাকেট করে বিক্রি করবেন।

আরও পড়ুন

×