বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি
![বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি](https://samakal.com/media/imgAll/2025January/untitled-11-1736611808.jpg)
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আতাহারে মহানন্দা প্রবীণনিবাসে শুক্রবারের পিঠা উৎসব সমকাল
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:১০
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের অদূরে আতাহারে গড়ে ওঠা মহানন্দা প্রবীণনিবাসে থাকেন কাঞ্চন আলী। বয়স ৮০ বছর পার হয়েছে। ভালো করে হাঁটতে পারেন না। কমেছে দৃষ্টিশক্তি। এ বয়সে পিঠা উৎসবে নাতি-নাতনি, ছেলে-মেয়ের বয়সীদের দেখে আপ্লুত তিনি। বৃদ্ধাশ্রমের পুকুরপাড়ে উৎসবে আসা শিশুদের সঙ্গে দিনভর দিলেন আড্ডা। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও তিন ছেলে নিয়ে শহরের টাউন স্কুল মোড়ে নিজ বাড়িতে পিঠাপুলির আয়োজনের কথা স্মরণ করে চোখ ভিজে আসে তাঁর।
প্রবীণনিবাসে শুক্রবার কাঞ্চন আলীর মতো অনেকে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠেছে এলাকার একমাত্র বৃদ্ধাশ্রমটি। বেসরকারি উদ্যোগে ২৫৬ জনের স্বেচ্ছাশ্রমে ২০১৬ সালে এটি গড়ে তোলা হয়। দোতলা ভবনে ৯ নারী এবং সাত পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা থাকার জায়গা। রয়েছে পাড় বাঁধানো পুকুর ও মাঠ। পাশে রয়েছে ফুলের বাগান। এখানে বসবাসকারী অধিকাংশই পরিবারের সদস্য বা স্বজনের বিরূপ আচরণে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
রাজশাহীর টেক্সটাইল মিলে সহকারী ম্যানেজার পদে চাকরি করেছেন জোহরুল হক নবাব। দ্বিতীয় বিয়ের পর মানসিক চাপে তিনবার স্ট্রোক করেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চাকরি শেষ হলে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে আশ্রয় পান এ বৃদ্ধাশ্রমে। তিনি বলেন, রাজশাহী শহরের বাড়ি স্ত্রীকে লিখে দেওয়ার পর সঞ্চয়ের ৬ লাখ টাকার চেক নিয়ে বের করে দেয় সন্তানরা। ১৯ মাস খোঁজ রাখেনি তারা। উৎসবে অনেকের সান্নিধ্য পেয়ে এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
নিঃসঙ্গ হয়ে এ বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের আড়ালে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন অনেকেই। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে
নানান আয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দারা অপরিচিতজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। এবারই প্রথম পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অপরিচিতদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেলেন তারা।
শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পিঠা উৎসব। অনেকে তাদের সঙ্গে পিঠা বানানোর কাজ করেন। আবার কেউ কেউ বাড়ি থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়ে
নিয়ে আসেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্টল সাজানো হয়। ছিল মোমো, ভাপা পিঠা, তেল পিঠা, নলেন গুড়ের পায়েস, পাটিসাপটা, সবজি, নকশি ও তিলের মতো হরেক রকম পিঠা। আমন্ত্রিত অনেকে পিঠা খেয়েছেন অসহায় প্রবীণদের সঙ্গে। এর সঙ্গে উপভোগ করেছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মহানন্দা প্রবীণনিবাসের কার্যকরী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুস সালাম বলেন, মানসিকভাবে আনন্দ দিতে ও তাদের উজ্জীবিত করতেই প্রথমবার এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এতে তারা আগের দুঃখ ভুলে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িতরা ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করতে পেরে খুশি। যারা এতিম তারা প্রবীণদের মধ্যেই নিজেদের বাবা-মাকে খুঁজে পান। শহরের বাইরে মুক্ত বাতাসে ভিন্ন রকম পিঠার স্বাদ উপভোগ করেছেন সবাই। প্রতিবছরের শীতে এ ধরনের আয়োজন করতে চান তারা।
- বিষয় :
- উৎসব পালন