অল্প খরচে দেওয়া হচ্ছে ডায়ালাইসিস সেবা
.
তবিবুর রহমান, সিলেট থেকে
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:৪৯
বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জাহানারা বেগম ডলি ৯ বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। গতকাল শনিবার সকালে সিলেট শহরের নাজিরের গাঁওয়ের বাদাঘাট রোডে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আসেন সেবা নিতে। তিনি বলেন, ৪ বছর ধরে সপ্তাহে দু’বার ডায়ালাইসিস করতে এ হাসপাতাল আসছেন। প্রথমে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে লাগত। অর্থ সংকটের কারণে টাকা কমানোর আবেদন করেন। এরপর সপ্তাহে একটি ডায়ালাইসিস বিনামূল্যে পান। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সাত মাস ধরে ডায়ালাইসিস, টেস্ট ও ডায়ালাইজার সেট বিনামূল্যে পাচ্ছেন।
সিলেটের এয়ারপোর্ট এলাকার মুদি দোকানি সুমির মিয়াও সেবা নিচ্ছেন এখানে। দুই বছর আগে কিডনি জটিলতা দেখা দেয় তাঁর। এ জন্য এক মাস আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর থেকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয় সুমিরের। তাঁর স্ত্রী রানী বেগম বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে ২৭০০ টাকা গুনতে হতো। স্বামীর চিকিৎসায় ভিটেবাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন অন্যের জায়গায় থাকি। তিন মেয়ের মধ্যে একজনের বিয়ে দিয়েছি। খুবই কষ্টে আছি। মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা চিকিৎসায় ব্যয় করতে হয়। এখন চিকিৎসা করানোর টাকা নেই। হঠাৎ শনিবার হাতের ফিস্টুলা নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বসাতে ৮ হাজার টাকা লাগবে। এই টাকা কোথায় পাব জানি না।’
সিলেটের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে ছয়টি ডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়েছে। সাত বছরে ৭০ হাজার ২৪১ বার সেবা দেওয়া হয়েছে। গত বছর ১৮ হাজার ৩২৪টি ডায়ালাইসিস সফলভাবে সম্পন্ন হয়। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৫৫ শতাংশ সেবা ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৩২টি ডায়ালাইসিস মেশিনে তিন শিফটে প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়।
হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক ডা. মুশফিকুর রহমান বলেন, গরিব ও অসহায় রোগী ভর্তুকির সুযোগ নিয়ে ধাপে ধাপে ৫০০, ১০০০ ও ১৫০০ টাকা জমাদানের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস করাতে পারেন। এমনকি গরিব রোগীদের ৫৬ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১২ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে ডায়লাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবাদানের জন্য একজন শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞসহ ৯ জন চিকিৎসক নেওয়া হয়েছে। সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশপাশের মানুষ সেবা নিতে আসেন। তবে সেবার চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারছেন তারা।
সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ মো. রেজা বলেন, উপশহরের কেন্দ্রটি গত সপ্তাহে সিলেট মূল শহরে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮০ জন কিডনি রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৫০) এক বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। শনিবার ছোট ভাই আলী হোসেনকে নিয়ে ডায়ালাইসিস করাতে আসেন তিনি। আলী হোসেন বলেন, তাঁর ভাইয়ের সপ্তাহে দু’বার করে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। অন্য জায়গায় ডায়ালাইসিস করাতে ৩ হাজার টাকার মতো লাগে। চিকিৎসার জন্য সহায়-সম্বল যা ছিল, বিক্রি করতে হয়েছে। খোঁজ পাওয়ার পর এ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন। এখানে প্রতি ডায়ালাইসিসের জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়। প্রতিমাসে গড়ে ৩ হাজার টাকার টেস্ট করাতে হয়। এ ছাড়া প্রতিবার হাসপাতালে যাতায়াতে ৬০০ টাকা ভাড়া এবং মাসে ৫ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। মাঝে মাঝে রক্তও দিতে হয়।
গতকাল এক ভিডিও বার্তায় সিলেট শহরে নূতন ভবনে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি বলেন, এই উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিতরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। উদ্বোধনের সময় সিলেটে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক ডা. মুশফিকুর রহমান, সমাজকর্মী তমারা হাসান আবেদ প্রমুখ।
- বিষয় :
- কিডনি