হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে পেটানোসহ নানা অভিযোগ
হাসপাতালে অনিয়মের প্রতিবাদে ময়মনসিংহে নাগরিক ফোরামের মানববন্ধন সমকাল
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৫৫
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের পেটানো, চিকিৎসক-নার্সদের রোগী ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে অসদাচারণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মানববন্ধন করে এসব অভিযোগ করে ময়মনসিংহ নাগরিক ফোরাম। পরে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস।
মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, কয়েক দিন আগে হাসপাতাল চত্বরে দায়িত্বরত কয়েকজন আনসার সদস্য এক রোগীর স্বজনকে ধরে পেটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় সমন্বয়কদের নজরে পড়ে। তারা হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে তথ্য তালাশ করেন। বিশেষ করে ময়মনসিংহ নাগরিক ফোরাম হাসপাতালের ১৬টি অনিয়মের তালিকা করেন। এই তালিকা নিয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মানববন্ধন করেন। সেখানে রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার, চিকিৎসকদের অনিয়মিত হাজিরা, রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ না করা, নিম্নমানের সরঞ্জাম কেনা, রোগীর স্বজনদের পেটানোসহ ১৬টি অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন তারা। এর পর হাসপাতালের পরিচালক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এহসান হাবীব, তানজিম ইসলাম মুনিম, তানিয়া আক্তারসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা।
সংগঠনের সদস্য সাঈদ ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিচালক হাসপাতালে আসার পর থেকে রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত রোগী ও তাঁর স্বজনরা চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের কাছে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। কয়েক দিন আগে কয়েকজন আনসার সদস্য এক রোগীর স্বজনকে পেটায়; যার ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ছাড়া সরকারি ওষুধ কম সরবরাহ করা, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ ও নিম্নমানের হাসপাতালের যন্ত্রাদি কেনার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর দাবি, এসব অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জামালপুর থেকে আসা রোগীর স্বজন হাসিবুর রহমান জানান, গুরুতর রোগী নিয়ে চার দিন আগে এই হাসপাতালে এসেছেন। হাসপাতালে শয্যা পাননি তাঁর রোগী। এই শীতের মধ্যে বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। এখানে চিকিৎসক ও নার্স মন চাইলে আসেন, মন না চাইলে আসেন না। অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। রোগীর খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বাথরুমে নিয়মিত পানি পাওয়া যায় না। তারা সব মিলে রোগী ভর্তি করিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস। নাগরিক ফোরামের সদস্য ও উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হাসপাতালের তালিকায় রয়েছে ১ হাজার সিট। পুরোনো একটি ভবন ভেঙে ফেলায় এখন সিট রয়েছে ৮৬০ জনের। অথচ আজকে (শনিবার) হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৩ হাজার ৪০০ জন। প্রতিদিনই এই অবস্থা থাকে।
তাঁর ভাষ্য, ১২টি জেলার রোগী ভর্তি হন এই হাসপাতালে। রোগীর ভারে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১ হাজার রোগীর ওষুধ, খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিতরণ করা হচ্ছে বাড়তি রোগীর মাঝে। রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে তিনি এর মাঝেও রোগীদের সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
আনসার সদস্যদের হাতে রোগীর স্বজনের মারধরের ভিডিও সম্পর্কে পরিচালক বলেন, ওই সব ভিডিও বর্তমান সময়ের না। অনেক আগের ভিডিও কে বা কারা হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে। এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই তাদের।
- বিষয় :
- হাসপাতালে