চরমপন্থিদের নিয়ে নতুন আতঙ্ক
খুলনার কাউন্সিলর টিপু খুন
কাউন্সিলর টিপু
হাসান হিমালয়, খুলনা
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:১১ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৭:০৯
এক সময় চরমপন্থিদের অন্যতম আস্তানা ছিল খুলনার দৌলতপুরের দেয়ানাসহ আশপাশের এলাকা। গাজী কামরুল ইসলামের হাত ধরে উত্থান হয় নিষিদ্ধ চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির। সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু কক্সবাজারে খুন হওয়ার পর সেই পুরোনো আলোচনা এলাকায় নতুন করে শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ১৭ বছর কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আসেন গাজী কামরুল। তিনি দেয়ানা এলাকার বাড়িতেই থাকতেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কারামুক্ত হন চরমপন্থি নেতা রিফুজি মঈন ও ট্যারা আসলাম। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর এলাকায় ফিরেছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী টাইগার খোকনের সহযোগী বড় শাহীন। তাদের সহযোগীরাও এলাকায় ফিরে নিজেদের জানান দিচ্ছে।
এসব নিয়ে পুরোনো চরমপন্থিদের একটি অংশের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় গোলাম রব্বানী টিপুর। হত্যার পর ওই অংশের দিকেই আঙুল তুলছে টিপুর পরিবার ও স্থানীয়রা। তাদের নাম নিতে ভয় পাচ্ছেন তারা। দেয়ানার মানুষের অভিযোগের তীরও গাজী কামরুলসহ ফিরে আসা পুরোনো চরমপন্থি নেতাদের দিকে। তারাও কেউ নাম মুখে নেওয়ার সাহস দেখাননি। একই আতঙ্ক দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের মধ্যেও।
স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘কারা টিপুকে মারতে পারে, সবাই কিছুটা আঁচ করছে। তাদের নাম বললে আমার লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, ১৯৯০ সালের দিকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন গাজী কামরুল। তাঁর অনুসারী ছিলেন টিপু। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে গাজী কামরুল আত্মসমর্পণ করেন।
২০১৩ সালে গাজী কামরুল কারামুক্ত হন। পরে টিপুসহ অনেকেই এলাকায় ফেরেন। গাজী কামরুল ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্রয়ে থাকতেন। টিপু ছিলেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী এস এম কামাল হোসেনের অনুসারী। পরে টিপু স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দেন।
২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর দৌলতপুরে খুন হয় নিষিদ্ধ সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। শহীদ ছিলেন গাজী কামরুলের অনুসারী। এই মামলায় টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার জন্য গাজী কামরুলকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ করেন টিপু। খুলনা সিটি নির্বাচনে টিপু ২০১৮ সালে পরাজিত হন, পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০২৩ সালে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও স্থানীয় চরমপন্থিদের সঙ্গে বিরোধে জড়ান টিপু। এক পর্যায়ে তাঁর বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
টিপুর ঘনিষ্ঠজনরা জানান, দীর্ঘ সময় পলাতক জীবনে টিপু কক্সবাজারে থাকতেন। সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। ২০১৮ সালের পর নিয়মিত এলাকায় থাকা শুরু করেন। ৫ আগস্টের পর পুরোনো সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফেরা শুরু করলে টিপু কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এর মধ্যে দৌলতপুরের এক শীর্ষ পাট ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে বিবাদে জড়ান টিপু। ওই ব্যক্তি টিপুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অভিযোগ করেন। টিপু খুনের পর এসব বিষয় ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে।
টিপুর বাবা গোলাম আকবর বলেন, কক্সবাজারে টিপুর কোনো শত্রু ছিল না। এখানকার শত্রুরাই কক্সবাজার গিয়ে টিপুকে হত্যা করেছে।
নগরীর দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানান, হত্যার বিষয়ে তারাও খোঁজখবর নিচ্ছেন। পুরোনো সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
জানাজা ও দাফন
শনিবার ভোরে টিপুর লাশ দেয়ানার বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এ সময় শত শত মানুষ টিপুর মরদেহ দেখতে ছুটে যান। দুপুরে জোহরের নামাজের পর দেয়ানা উত্তরপাড়া মাঠে টিপুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাড়ির পাশের কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
- বিষয় :
- খুন