ঢাকা শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে হঠাৎ তদন্তে গতি

হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে হঠাৎ তদন্তে গতি

আব্দুল মমিন মণ্ডল, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল মোতালেব, আবু তালেব

 আমিনুল ইসলাম খান রানা, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:২৭

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিস্ফোরণে একটি চরমপন্থি দলের সদস্য ফজলু হক নিহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কথিত আছে, ওই ঘটনার মূল হোতা সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডল ও তাঁর নির্বাচনী সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম ওরফে ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল। কিন্তু শুরু থেকেই রহস্যজনক কারণে পুলিশের সন্দেহের বাইরে ছিলেন তারা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি শুরু থেকেই আড়ালের চেষ্টা করেন বেলকুচি থানার সাবেক ওসি আনিছুর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার জন রানা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক দিন আগে জন রানা চাকরি ছেড়ে সস্ত্রীক কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। 
তবে বিস্ফোরণের ঘটনার ১৩ মাস পর ওই মামলার তদন্তে হঠাৎ গতি ফিরেছে। যদিও ঘটনার মূল অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন বেলকুচির থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আহসানুজ্জামান। কিন্তু তদন্তে ধীর গতির কারণে মামলাটি পরে স্থানান্তরিত হয় ডিবি পুলিশে। জেলা ডিবির সাবেক ওসি জুলহাজ উদ্দিন তদন্তের ভার নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেবের ভাই আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করেন। কিন্ত মোতালেবকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হন। এ কারণে তদন্ত মাঝপথে ঝুলে যায়। এর পর ইন্সপেক্টর জুলহাজ উদ্দিন বদলির পর নতুনভাবে তদন্তের দায়িত্ব পান জেলা ডিবির এসআই নাজমুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধেও ঘটনার মূল হোতাদের না খুঁজে কালক্ষেপণ ও গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। 
এদিকে স্থানীয়দের সহায়তায় গত ৫ জানুয়ারি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা মোতালেব। এর পর মূল হোতাদের ইন্ধনে মোতালেব ও তালেবকে অভিযুক্ত দেখিয়ে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিলের পরিকল্পনা করেন এসআই নাজমুল। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি জেনে গণমাধ্যমকর্মীরা তৎপর হলে এসআই নাজমুলের কাছ থেকে নথিপত্র জব্দ করেন জেলা ডিবির নতুন ওসি একরামুল হক। এরই মধ্যে তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। ওসি একরামুল গত সোমবার বেলকুচিতে তদন্তে যান। কিন্তু পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ও সাবেক এমপি মমিন মণ্ডলকে খুঁজে পাননি তিনি।  ২০২৩ সালের ওই ঘটনায় মোতালেবের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান একটি চরমপন্থি দলের সদস্য কুষ্টিয়া জেলা সদরের মিলপাড়ার বাসিন্দা ফজলু হক। অভিযোগ আছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের প্রতিপক্ষ আরেক সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে ঘায়েলে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগের লোকজন কুষ্টিয়া থেকে বোমা তৈরির কারিগর ফজলুকে ভাড়া করে বেলকুচিতে আনে। কিন্তু বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে মারা যান ফজলু। নিহতের ভাই বিপুল হক মামলা করেন। 
গত সোমবার বেলকুচিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা একরামুল হক বলেন, ‘যেহেতু খুব শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করা হবে, তাই আসামিদের ভূমিকার বিষয়ে জানতে নিজেই সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছি। সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম বলেন, বাদীর এজাহারে সাবেক এমপি মমিন মণ্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের নাম নেই। 
সিরাজগঞ্জ সিআইডির সাবেক ইন্সপেক্টর ছায়া-তদন্ত কর্মকর্তা মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, বোমা বিস্ফোরণকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ উল্লেখ করে মামলার আগেই আলামত নষ্ট করে ফেলে আসামি মোতালেব ও তার স্বজন। বেলকুচি থানা পুলিশের গড়িমসির কারণে ঘটনার আলামত বাড়ির পাশে খালে ফেলা হয়। এমনকি বোমার আগুনে ঝলসে যাওয়া ঘরের দেয়াল রঙ করা এবং ভাঙা টাইলসও পরিবর্তন করা হয়।  
 

আরও পড়ুন

×